নীরব , নিস্তব্ধ রজনীতে এই ব্যস্ত নগরীর বুকে আমার পথ চলা , পদ্মার সাথে প্রেম এবং আমার ইলিশ ভোজন । আমার সুখসন্ধানী মন

চলমান সময়কে বেধে রাখার উপায় হলো বয়ে চলা সময়ে একন কিছু কাজ করো যা সারা জীবন স্মৃতি হয়ে হলেও তোমার পাশে  থাকবে । রাতের ঢাকায় এর আগেও বেশ কয়েকবার হেটেছি । শাহাবাগ থেকে , সংসদ ভবন , তার পর বিমান বন্দর,  কিন্তু একা । ইচ্ছে ছিলো অনেক কয়েকজন এক সাথে রাতের ঢাকায় ঘুরবো , লাল চায়ের সাথে জমিয়ে আড্ডা, গান । আর ব্যান কিংবা পিক আপে করে শহরটাকে ঘুরে দেখা । সময় , সুযোগ , কিংবা মানুষ । তার উপর দেশের আইন শৃংখলার কথা চিন্তা করে তা হয়ে উঠে নি । শেষ রাতের এই ব্যাস্ত নগরী কেমন করে ঘুমায় । কিভাবে নীরব হয়ে যায় , তা দেখেছি বছর এক আগে । শেষ এক বছর আর তা হয়ে উঠেনি ।

শরীর কিংবা মন কোনটাই ভালো যাচ্ছে না । নিজের সাথে তাল মিলিয়ে চলছে না  কোনটাই । মনে হচ্ছে একটার সাথে অন্যটার আড়ি , আবার তাদের জোট হয়ে আমার সাথে আড়ি । শারীরিক , মানসিক , আর্থিক , সব দিক থেকে যখন একটু সমস্যায় , তিন দিন ভাত থেকে দুরে ছিলাম , অসুস্থতার কারণে , সর্বোচ্চ বাসার কাছের লাল চায়ের দোকান ছাড়া যাওয়া হয়নি দুরে কোথাও । চার দেয়ালে বন্ধী জীবন নিজেকে সব সময় কারাগার কারাগার স্মরণ করিয়ে দেয় । কোথাও কাউকে খুজে বেড়ানোর এই মন যখন কাউকে না পেয়ে শূণ্য হাতে নীড়ে ফিরে । তখন এর থেকে বেশী ভাববার আর কিছুই থাকে না। হাতাশাকে ও যখন আশে ঘুরতে দেখা যায় । তখন অনুপ্রেরণা , নেওয়ার জন্য কাউকে দরকার পড়ে , কিন্তু কেউ নেই । বন্ধু শব্দটির সাথে আমার সেই অনেক কালের আড়ি রয়েছে । কারণ এ যাবৎ কাল অবধি কাউকেই পাই নাই , যারা বন্ধু বলবে দুইটি অভিন্ন হৃদয়ের ভিন্ন দেহকে বুঝবে । সবাই একটা সাময়িক সময়ের জন্য আসে আবার কাজ পুরালে কেটে পড়ে । তখন এই শব্দটা নিয়ে আর ভাবিনা । নিজেই নিজের বন্ধু , অনলাইন অফলাইন ডায়রীর পাতা , কলম , বই এই সকলই আমার বন্ধু । হঠাৎ মেঘ এসে কয়েক ফোটা বৃষ্টি ঝরালো উত্তপ্ত মরুর বুকে , যখন এই তৃষ্ণাত্ত কৃষকের  মনে একটু সুখের হাসি ফুটবে , তখন আবার মেঘ দল হরিয়ে গেলো । না পানি কিংবা সুখ কোনটাই আসবে না । নিজের ভাবনা , কাজ , এই নিয়ে সময় কেটে যাচ্ছে ব্যস্ত নগীরর বুকে । এই দিকে দিন দিন শরীর খারাপ থেকে খারাপ হচ্ছে । যাই হোক তারপরও চলছে বেচে থাকার লড়াই । কারণ আমি যে স্বপ্ন যোদ্ধা । টিমের কাজে এডিট প্যানেল , হঠাৎ কাছের ছোট বোনের ফোন , ভাইয়া কোথায় তুমি , উত্তরে স্থানের কথা জানানোর পর ওখানেই থাকতে বলে ফোন টা কেটে দিলো । রাত ১০ বেজে ৩০ মিনিট । আবর ফোন তারা চলে এসেছে । প্যানেল থেকে বের হয়ে রাতের খাবার সারলাম হোটেলে । তারপর তাদের সাথে সাক্ষাত । এই রাতে টিএসসি যাবে , ওরা তিন জন , আমি সহ চারজন । ঠিক আছে চল , অসুস্থ থাকার কারণে কোথাও বের হওয়া হয়নি । একটু ঘুরে আসি হয়তো মন ভালো থাকবে ।

এই চিন্তায় যাত্রা । লেগুনাতে করে মোহাম্মদপুর থেকে  ঝিগাতলা । তখন জানলাম আরেকজন আসছে । একটু পর শুনলাম আরো ২জনের কথা । তখন গিয়ে মনে একটু প্রশ্নের উকি ঝুকি দেখা মিললো , কিব্যপার কিহয়েছে । এতো রাতে । এতো মানুষ , আবার প্রশ্ন আবার একই উত্তর । সিটি কলেজ সাইন্স ল্যাব , রিকশায় চড়ে পলাশী মোড় , সকল দোকান বন্ধ । তার পর আবার রিকশা , ঢাকা মেডিকেল । দোকান গুলোতে বসার জায়গা  নেই ।  একটা দোকানে একটু জায়গা পেতেই লাল চায়ের আড্ডা । সাথে আমার নিকোটিনের সাদা  ধোয়া । তখন মোট সাত জন আমরা । আবরও প্রশ্ন , তারপর জানতে পারলাম আজ রাত বাহিরে কাটাবে , ঘুরবে আড্ডা দিবে । চিন্তা করলাম ভালোই , ইচ্ছে আর একটু শান্তি দুটাই হলো । কিন্তু কোথায় যাবো ,  আচ্ছে আগে দেখি কি পাওয়া যায় । ঢাকা মেডিকেল এর সামনে তখন সাড়ে বারোটা কি একটা বাজে ঘড়ি দেখি নাই । খোজ শুরু , ভ্যান গাড়ি , এই ঘুমন্ত শহরটাকে ঘুরে দেখবো । রাত ভোর হবার সাথে সাথে আবার নিজ নীড়ে ফিরবো । হঠাৎ আবার সিদ্ধান্ত হলো , পিকআপ পেলে গাজীপুর কিংবা মাওয়া ফেরি ঘাট , পদ্মা আর ইলিশ , এই দুইয়ের মিশ্রণ হতে পারে , পরে ঠিক হলো পদ্মা আর ইলিশের কাছেই যাবো । কিন্তু পিকআপ কই , কিছুক্ষণ অপেক্ষা । আবার যাত্রা শুরু ভ্যান পাওয়া গেলো , বাংলা মটর , ওখানথেকে কাওরান বাজার , তারপর পিকআপ সোজা মাওয়া ঘাট । কিন্তু না তা হলো না ।
বাংলামটর  যেতেই আবার বিররীত মুখী চলন , অনেক ক্ষণ অপেক্ষার পর একটা পিকআপ পাওয়া গেলো বে বাবুবাজার আসবে । চলে আসলাম , ওখান থেকে আবার লেগুনা সোজা মাওয়া ঘাট । শহর থেকে গাড়ি বের হচ্ছে শীতের তীব্রতা বাড়ছে । একটু একটু শরীরের কাপুনি আসছে । কিন্তু মনে একপ্রকার শান্তির বার্তা ও আছে !! এইটা হওয়ার কথা ছিলো , কারণ বহুদিনের আশা পূরণ হতে  চললো । ইচ্ছে ছিলো এমন একটা রাত আসবে আমি খুব আড্ডা দিবো । মনের ভিতর থাকা সকল কথা ওই রাতেই দুর করবো , কিন্তু না , বরং আরো অনেক গুলো চিন্তা , অনেক গুলো মন খারাপ , অনেক গুলো হতাশা আমায় ঘিরে ধরতে শুরু করলো , যেখানে কুয়াশা আর শীতের চাদর আমায় ঘিরে ধরার কথা ওখানে জড়িয়ে ধরলো আমার সেই চিরো চেনা শত্রু রা । না আমি ঠিক আছি । নিজেকে নিজে ঠিক রাখার ব্যর্থ চেষ্টা । খুব মিস করছি তোকে জানিস , কিন্তু তুইতো আর ডায়রী না যে তোকে নিয়ে যাবো । কি আর করার , কষ্ট গুলো নিজের ভিতরেই রেখে দিতে হলো । ইচ্ছে করছিলো জোরে খুব জোরে চিৎকার দেই , চিৎকার দিয়ে বলি , আমার সুখ পাওয়ার অধিকার আছে । আমি তো কারো ক্ষতি করি নাই , তবে আমার জন্য কেন সব সময় এমন হবে । শুনেছি মানুষ একবার ধোকা খেলে পরের বার ঠিক হয় আমি কেন হইনা ? সবাই এমন কেন । একটু সুখ একটু সাপোর্টই তো চেয়েছি , হ্যাঁ আমার এখন পকেট ভর্তি টাকা নাই । কিন্তু তাই বলে কি সুখ পাবো না ? কই একটা সময় তো অনেক টাকা আয় করছি তখনও সুখ ছিলো না । কাছের মানুষ গুলোও তখন ভালোবাসার অভিনয় করছে । কিন্তু যেই না টাকা পুরিয়ে যেতে শুরু করলো ঠিক তখনই গুগল সার্চ দিয়ে ও তাদের সন্ধান মিলে না । শেষ যার উপর ভরসা করে আবার চলতে শুরু করা , সেও বদলে গেলো । যাক ভালো , রাতটা সত্যিই ভালো ছিলো , অনেক করে মনে পড়েছে , হিমাদ্রী , মৃণালীনি , অনেকত , আর নুরীকে । কিন্তু ওরা কেউ আসে নি , ছিলিনা তুই ও । যে থাকার কথা ছিলো , সেও চলে গেছে । মাওয়া ঘাট এসে গেছে । নিজেকে ঠিক রাখার ব্যর্থ চেষ্টা আমার থেকে নেই । নিকোটিন , সবার সাথে হেসে কথা বলা । সব মিলিয়ে আমি ভালো আছি , এইটাই নিজেকে নিজের কাছে প্রমাণ করতে চাইছি । কিন্তু না । এই দোকান ওই দোকান , ঘুরে ইলিশ এর দামাদামি চলছে
অবশেষে অনেক ক্ষণ ঘুরে দুই খানা ইলিশকে পচন্দ করা হলো , তাদের জবাই দেওয়ার জন্য । সেই সাথে তাদের দিয়ে ভর্তা করা হবে । 
অসময়ের কারণে একটু দাম বেশী ১২০০ টাকায় দুখানা ইলিশ । এই দিকে মোবাইলে চার্জ এবং টাকা কোনটাই নাই । কেউ অপেক্ষা করছে , আর ভাবছে আমি তাকে এড়িয়ে চলছি , সত্যিকারে বিষয়টা আমার ফোনে টাকা নাই , এই দিক ওদিক ঘুরে না পেয়ে , ফেইসবুকে টু দিলাম , , টাকা আসলো , কিন্তু তাকে আর পাওয়া গেলো না । সে ও দুরের চাদের নিচে আড়াল হয়ে গেলো । 
খবার তৈরি , এইবার খাবার পর্ব । রাত তখন ৩.৩০ মি . 
ভালোই দেখাচ্ছে , খাওয়া শুরু । সেই সাথে নানান কথা , ভিন্ন আড্ডা । 


খাওয়া শেষ  মালাই চায়ের পর্ব । যদিও দামের সাথে স্বাদের কোন মিল পাইনি । তারপরও , সুখতো আর টাকায় থাকে না । মনে থাকে । তাই যান্ত্রিক থেকে তান্ত্রিক জীবনে , আবার মনের সাথে তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা । রাত বাড়তে শুরু হলো আমাদের ঢাকায় ফিরার তাগিদ । আবার লেগুনা , কিন্তু সুবেধার জন্য লেগুনা ছেড়ে বাসে যাত্রা একটু যেতেই বাস থামিয়ে দিলো , সে যাবে না । যাত্রি আসুক আমাদের বসতে বলে সে ঘুরা ঘুরি করছে , চোট এক খন্ড ঝগড়া , তারপর আবার যাত্রা । চির চেনা পিকআপ । ঠান্ডা কাপুনী দেওয়া ঠান্ডা সবাই ঝিমাচ্ছে , নিজেদের ঠিক রাখতে গানের পালা । দেখতে দেখতে আবার সেই ব্যস্ত নগরীর বুকে । ঠিক বাসায় । হ্যাঁ আমি ঘুরেছি , কিন্তু সব সময় আমায় কিছু না কিছু তাড়া করেছে । কিন্তু আর না । কথা ছিলো , যেই দিনই এমন রাত আসুক না কেন , ওই দিন জীবনের অনেক কিছুই ঝেড়ে ফেলে দিবো । তাই করলাম , আজ থেকে নিজের জন্য বাচা , নিজের জন্য মরা । কেউ থাকলে ভালো না হলে বিন্দাস জীবন । তবে হ্যাঁ মানুষ কখনই একা থাকতে পারেনা । বাস্তাবে না হোক মনে কোনে হলেও কেউ না কেউ উকি দেয় । ওটাকে ঠিক সামলে নিবো । ওটার সাথেই প্রেম করবো । আর প্রেম হলো স্বপ্নের সাথে । প্রেম আমার কাজের সাথে । .... মৃত্যু কোন সামাধান নয় । বেচে থেকে লড়ে যাওয়াটাই সামাধান । আর আমি সেটাই করবো যে আমি চাই । কেউ আমার শত্রু নয় , না আমি কারো শত্রু , সবাইকে স্বাগতম ।

তবে , এলিস , মাহমুদ ভাই , জেরিন , সহ তোদের সবাইকে , অনেক ধন্যবাদ । অনেক দিনের ইচ্ছে  টা পূরণে সহায়তা করার জন্য । বেচে থাক ভালোবাসা । স্মৃতির ডায়রীতে আরেকটি রাত যোগ হলো, যেখানে তোরা আছিস , আছে , পদ্মার পাড়ে কাটানো সময় , আছে ইলিশ ভাজা । এবং অনেকের মাঝে থেকেও আমার একাকিত্ব । 

Comments

Popular posts from this blog

প্রবাহমান জীবন ও কিছু কথা!

"ফরেস্ট গাম্প " একটি অনুপ্রেরণার গল্প, একটি মৃত প্রাণকে তাজা করার সিনেমা

পানাম নগর, আমার এবেলা ওবেলা