"ফরেস্ট গাম্প " একটি অনুপ্রেরণার গল্প, একটি মৃত প্রাণকে তাজা করার সিনেমা

হোক কাজ , হোক ভালো লাগা কিংবা স্বপ্নের পথ চলা থেকে , সে যাই হোক সিনেমা দেখা এবং সেটা নিয়ে অন্যের সাথে শেয়ার করতে (ভালো কিংবা মন্ধ সে যাই হোক) আমার ভালোই লাগে । পচন্দের তালিকায় প্রথম জীবন থেকেই , অনুপ্রেরণার গল্প , অনুপ্রেরণা পাবো এমন সিনেমেই  শীর্ষে । সেই সুবাদে "ফরেস্ট গাম্প " দেখা । না এখনই প্রথম না , এর আগেও মোট ৬ বার দেখা হয়েছে সিনেমা খানা । আজ কাল পরশু করে করে লেখা হয় না , জানানো হয় না আপনাদের কে , কেমন লেগেছে ? কেন আপনি দেখবেন কিংবা দেখবেন না !!


পরিচালক: রবার্ট জেমেকিস
মুক্তিকাল: জুলাই ৬, ১৯৯৪
দৈর্ঘ: ২ ঘণ্টা ২২ মিনিট
দেশ: হলিউড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
প্রযোজক: উইন্ডি ফিনারম্যান, স্টিভ তিস, স্টিভ স্টারকি, চার্লস নিউরিথ
চিত্রনাট্য: এরিক রুথ, উইনস্টন গ্রুমের ‘ফরেস্ট গাম্প‘ উপন্যাস অবলম্বনে
IMDB রেটিং: ৮.৮ (এই আলোচনা লিখার সময় পর্যন্ত ১০,৩০,৯৫৫ জন রেটিং দিয়েছেন।)


চলমান সিনেমা :
বাসের জন্য অপেক্ষা করতে করতে ফরেস্ট গাম্প বলতে শুরু করে তার জীবনের গল্প, এবং শুরু হয়ে যায় ইতিহাসের অন্যতম আলোচিত চলচ্চিত্র রবার্ট জেমেকিস’র মাস্টারপিস “ফরেস্ট গাম্প“। নায়কের নাম অনুযায়ী সিনোমার নামকরণ করা হয় ।  সর্বকালের অন্যতম সেরা ছবির তালিকায় জায়গা করে নেয়া এই চলচ্চিত্রটি ১৯৯৪ সালে মুক্তি পাওয়ার পর আয় করে নেয় ৬৭৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যার নির্মাণব্যয় ছিলো মাত্র ৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ৬৭ তম অস্কারে এই চলচ্চিত্র ১৪ টি বিভাগে মনোনয়ন পেয়ে সেরা অভিনেতা সহ জিতে নেয় ৬ টি বিভাগে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার।

কাহিনী বিন্যাস :
পায়ের সমস্যা , বোকাসোকা ফরেস্ট গাম্প, আইকিউ কম থাকায় স্কুলে ভর্তি করতে চায় নি স্কুল প্রধান , তাকে স্কুলে ভর্তি করাতে তার মা দেহ দান করেছিলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে । পায়ে সমস্যার থাকায় ফরেস্ট হাটতে পারতো না ভালো করে । সহপাঠি , আশেপাশের সবাই তাকে বিভিন্নভাবে ক্ষেপাত , রাগাতে চেষ্টা করতো । স্কুলের প্রথম দিন পরিচিত হয় জেরিস সাথে , সেই গাম্পকে কেবল হাটা নয় দৌড়াতে উৎসাহ করবে । জেনির মুখ থেকেই সিনেমার সব থেকে ভালো লাগা ডায়ালগটি শুনা যায় - " রান ফরেস্ট রান " । পরবর্তিতে যে হবে গাম্প’র স্বপ্নের নায়িকা এবং স্বপ্ন ভঙ্গের রূপকার। গাম্পের কোলেই তার মায়ের মৃত্যু ঘটে । মা এইডসে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় ।  ফরেস্ট গাম্প ঘটনাচক্রে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে আমেরিকার কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর সাথে।কলেজে উঠার পর থেকেই জেনি গাম্পকে এড়িযে চলতে শুরু করে । নতুন একজনকে সংঙ্গী করে চলা শুরু করে ।  গাম্প তার মন থেকেই জেনিকে চাইতো। কিন্তু জেনি তাকে নিতান্ত শিশু ভেবে দূরে ঠেলে দিতো । গাম্প চলে যায় ভিয়েতনাম যুদ্ধে , ওখানে  থেকেও প্রতি দিন তার স্বপ্নের নায়িকাকে চিঠি পাঠাতো । কিন্তু জেনি কোন চিঠির উত্তর ই গাম্পএর কাছে আসে না । ভিয়েতনাম যুদ্ধে গিয়ে পায় সহযোদ্ধা বুবাকে , যার আজন্ম স্বপ্ন ছিলো চিংড়ির ব্যবসা করা, যুদ্ধে যে মারা যাওয়ার পর তাকে দেয়া কথা রাখতে গাম্প পরবর্তিতে কিনবে মাছ ধরার বোট এবং এতে লাভ করার পর যুদ্ধের কাপ্তান ক্ষ্যাপাটে লেফ. ড্যান এর সাথে শেয়ার কিনে মালিক হয়ে যাবে বিশ্ববিখ্যাত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান Apple Inc. এর, যেটাকে গাম্প বলবে some kind of fruite company!
তবুও শেষ পর্যন্ত সে সাধারণই থেকে যায়। ফরেস্ট গাম্প যেন একজন সাধারণ নাগরিকের চোখে দেখা আমেরিকার ইতিহাসের সংক্ষিপ্ত পাঠ! পরিচালক রবার্ট জেমেকিস শুধু আমেরিকানদের জন্য নয়, বিশ্ববাসীর জন্যেই দারুণ অনুপ্রেরণা সৃষ্টিকারী চলচ্চিত্র তৈরি করেছেন।




কিছু ভালো বিষয় :

সিনেমার  প্রথম থেকে প্রায় শেষ পর্যন্ত  গাম্প তার মমতাময়ী মাকে প্রায়ই স্মরন করবে বিভিন্ন উপলক্ষে। গাম্প এর অদ্ভুত আচরণে বিস্মিত হয়ে মানুষ যখন বলবে তুমি কি বোকা না পাগল, প্রতিউত্তরে গাম্প বলবে-  “Mama says, ‘Stupid is as stupid does’.” সে তার মায়ের কথা আরও উল্লেখ করবে এভাবে, “My mama always said life was like a box of chocolates. You never know what you’re gonna get.” গাম্প এর মা মিসেস গাম্প ছেলের জন্য সম্ভবপর সব করে যাবেন। সবসময় গাম্প’র মায়ের চেষ্টা থাকবে তার ছেলেকে যাতে কেউ অন্যরকম বলতে না পারে। মিসেস গাম্প তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন - “Don’t ever let anybody tell you they’re better than you, Forrest.”

গাম্প তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ পার করবে জেনিকে পাওয়ার চেষ্টায়। কিন্তু জেনি বার বার কাছে এসেও ফস্কে যাবে। সেই কলেজে উঠার পর থেকেই গাম্প দেখবে জেনি তাকে নিতান্ত শিশু ভেবে দূরে ঠেলে দিয়ে অন্য কোন একজনের সাথে চলে যাচ্ছে। গাম্প তার মন থেকেই জেনিকে চাইতো। সে সুদূর ভিয়েতনাম থেকে নিয়মিত চিঠি পাঠাবে জেনিকে, কিন্তু জেনি তার কোন উত্তর দিবে না। তারপরও গাম্প’র কোন আফসোস থাকবে না, কারণ গাম্পরা ভালোবেসে যায় শুধু, কিছু পাওয়ার আশা করে না। আমরা দেখতে পাব ভিয়েতনাম যুদ্ধে গাম্প কেমন বীরত্বে উদ্ধার করবে তার সহযোদ্ধাদের।

গাম্পের একটা অসাধারন উক্তি-
“Dear god,make me a bird so i can fly far,
far,far away from here…”

সিনেমা দেখার পর থেকে যে ডায়লাগ কিংবা শব্দটি প্রায় কানের কাছে শুনি :
Run Forest Run -‘রান ফরেস্ট রান‘



আমার দৃষ্টিতে ফরেষ্ট গাম্প : 
ফরেস্ট গাম্প এমন এক ছবি যা যে কোনো সাধারণ মানুষকে বেঁচে থাকার, বড় হওয়ার এবং সরল-সুন্দর হওয়ার স্বপ্ন দেখায়।  কেন জানিনা সিনেমাটি যতবারই দেখি সিনেমা শেষে স্তব্ধ রজনীর নীরবতা আমাকে জীবনের প্রতি গাঢ় করে দিয়েছে।
বিশ্বাস করে নিলাম- জীবনের রং যত খারাপ হোক, সে রং যেকোনো সময় রংধনু হয়ে আপনাকে পাল্টে দিতে পারে।

সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ  ধুপধাপ মারা মারি পচন্দ করেন, আইটেম গান , মারা মারি , নায়িকার সাথে কেমিষ্ট্রি না থাকলে সেটাকে সিনেমাই মনে হয় না তাদের জন্য এই মুভি না ।ফরেস্ট গাম্প চলচ্চিত্রটি নিঃসন্দেহে একটি ক্লাসিক, এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা রবার্ট জেমেকিস’র কালজয়ী মাস্টারপিস।  সুতরাং আপনারা দূরত্ব বজায় রাখুন । 




Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

প্রবাহমান জীবন ও কিছু কথা!

পানাম নগর, আমার এবেলা ওবেলা