আত্মহত্যাই কি ব্যর্থতার একমাত্র সামাধান : ব্যর্থতা, চেষ্টা এবং সফলতার এক অদ্ভুত বাস্তবিক মিশেল

কখনই পতন আবার কখনই উত্থান এইতো জীবন । কিন্তু শেষ কয়েকদিন এতো পরিমাণ মানুষের মৃত্যু খবর পেয়েছি তাতেও সমস্যা ছিলো না , যদি না মৃত্যুগুলো  স্বাভাবিক মৃত্যু হতো । বেশীর ভাগই গলায় ফাঁস কিংবা বিষ পানে । আপসুস তাদের জন্য , যারা জীবনের ভয়ে , হেরে যাওয়ার ভয়ে মৃত্যুকে বেচে নিয়েছে । জানি আমার এই লেখায় , এর সংখ্যা কমবে না , তারপরও বলবো , সত্যি তারা বড্ড বেশী বোকা ছিলো । যাই হোক , এ যাবৎ কালে প্রাপ্তি বলতে আপনাদের কিংবা সফলতার গ্রামার খুজে যা পেয়েছি , সেই হিসেব অনুযায়ী আমি ব্যর্থদের দলের একজন । তবে আমার কাছে তা মনে হয়নি , কারণ আমি চেষ্টা করছি এবং করছি । তারাই মরে যারা চেষ্টা করে না । মুলত ততদিন আপনি মরবেন না ,যতদিন না , আপনি আপনার কাংক্ষিত বস্তু কিংবা স্থান না পাবেন । পাওয়ার পরে মরার চিন্তা করতেই পারেন কারণ তখন আপনার আর চাওয়ার কিছুই নেই । কিন্তু আজকাল যারা মরছে তাদের সবাই না পাওয়ার কারণেই মরছে । কেন জানি না তাদের জন্য মায়া হয়না , কেবল আপসুস হয় কারণ বেচে থাকলে তারা হয়তো অনেক কিছুই করতে পারতো ।
 কিংবা চেষ্টা করতে ভয় পায় । নেশা বলতে স্বপ্ন দেখা , তার পিছে ছুটে চলাটাই প্রধান নেশা । সেই সাথে বই পড়া এমনকি মুভি দেখার নেশা ও আছে ।  যাই হোক ভিন্ন আলোচনায় না যাই । লেখা একটি সিনেমা নিয়ে ।  মোট ৯ বার দেখা হয়েছে সিনেমা টি যখনই কাজ থাকেনা , কিংবা হাতাশা নামক বস্তুটির আনাগোনা লক্ষ করি তখনই সিনেমাটি দেখতে বসে যাই । জ্বি আমি  The Pursuit Of Happyness’ এর কথাই বলছি  ভালো লাগার একটি মুভি । "A Beautiful Mind " এর  পর আরেকটি ভালো লাগার মুভি হলো "Pursuit of Happyness"  । কেন জানি না প্রিয় নায়কদের তালিকায় প্রথম দিকে আছে  Will Smith  ।  চলুন এক নজরে সিনেমাটি সর্ম্পকে জেনে নেই ।





Directed by : Gabriele Muccino
Produced by : Will Smith,Todd Black
Written by : Steven Conrad Based on The Pursuit of Happyness by Chris Gardner
Starring : Will Smith, Thandie Newton, Jaden Smith
Music by : Andrea Guerra
Cinematography : Phedon Papamichael
Edited by : Hughes Winborne
Country: United States
Language: English
Release date : December 15, 2006
Running time : 117 minutes
Budget : $55 million
Box office : $307.1 million


সিনেমাটি ক্রিস গার্ডনার নামের আমেরিকান  এক ব্যক্তিকে নিয়ে। যিনি একাধারে মাল্টি মিলিয়নিয়র ব্যবসায়ী, স্টকব্রোকার, লেখক, বিনিয়োগকারী, মোটিভেশনাল স্পিকার। সিনেমাটিতে তুলে ধরা হয়েছে ক্রিস গার্ডনারের ১৯৮০-৮১ সাল পর্যন্ত প্রায় এক বছরের দুর্বিষহ জীবন সংগ্রাম নিয়ে। এই বিপর্যস্ত সময়টাতে সবসময় সাথে ছিল তার বড় ছেলে ক্রিস্টোফার জুনিয়র। স্ক্রিনে যার চরিত্র নিপুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন কারাতে কিড Jaden Smith। ক্রিস গার্ডনার চরিত্রে ছিলেন হলিউডের মেন ইন ব্ল্যাক তারকা Will Smith আর তার স্ত্রী লিন্ডা চরিত্রে ছিলেন Thandie Newton। একজন মানুষ কত কষ্টে তার জীবন অতিবাহিত করেছিলেন এবং একসময় তিনি সফলতার শীর্ষে অবগাহন করেন সিনেমাটি  না দেখলে তা অনুধাবন করতে পারতাম না। সমস্যা, সমাধান চেষ্টা, ব্যর্থতা এবং সফলতা এই চারটি জিনিস ই হল ‘দ্যা পারসুইট অফ হ্যাপিনেস’ সিনেমাটির মূল বিষয়বস্তু। কত রিভিউ দেখলাম এই সিনেমা নিয়ে হিসেব নেই। সবাই লিখেছিল এই সিনেমা দেখার পর অকপটেই আপনার চোখ ভিজে যাবে। তখনই পণ করেছিলাম আমি যখন দেখবো অন্তত মনকে এমন শক্ত করব যাতে আমার চোখে কোন পানি না আসে! কিন্তু বাস্তবতা ছিল অন্যরকম। সিনেমার একসময় দেখলাম ভাড়া দিতে না পারায় তাদের বাবা-ছেলেকে মোটেল থেকে বের করে দেওয়া হল তখন তারা এখানে ওখানে ছোটাছুটি করেও থাকার কোন ব্যবস্থা করতে পারতেছি না। তখন রেলস্টেশনের পাবলিক টয়লেটে তারা তাদের রাত অতিবাহিত করে। এই দৃশ্যটা আমি কখনো ভুলতে পারবো না। ঠিক এই দৃশ্যটা আর স্টকব্রোকার হওয়ার সময় ওই দৃশ্যটা আমার চোখে জল আনতে বাধ্য করে।

প্রত্যেক সফল মানুষের পিছনে তার স্ত্রীর অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু যখন আপনি সফলতা লাভে ব্যর্থ হচ্ছেন আর ঠিক সেইসময় আপনার অর্ধাঙ্গিনী আপনাকে ছেড়ে চলে যায় তখন আপনার কেমন অনুভূতি হবে? একটা সময় ক্রিস গার্ডনার পরিবারের ভরণপোষণ, বাসা ভাড়া, ট্যাক্স বিল ইত্যাদি নানান অর্থ জোগাতে ব্যর্থ হচ্ছিল, প্রতিদিন স্ত্রীর রাগান্বিত স্বরের বিপক্ষে শুধু ‘I m trying, I m trying’ বলে ছোট্ট প্রতিবাদ সে করে যাচ্ছিল। ঠিক তখনই একদিন তার স্ত্রী তাকে জানিয়ে দেয় সে চলে যাচ্ছে, এভাবে আর সে তার সংসার করতে পারবে না। কিন্তু সন্তান কার কাছে থাকবে? সিদ্ধান্ত হয়ে একসময় জুনিয়র ক্রিস্টোফার তার বাবা গার্ডনারের কাছেই থাকবে। স্ত্রী ছেড়ে গেল, থাকার মত বাসস্থানও রইলো না, চাকরিও নড়বড়ে এমতাবস্থায় আজ এখানে কাটে তো কাল ওখানে তবুও দমে যাননি তিনি। কঠোর পরিশ্রম, আত্মবিশ্বাস, মনোবল, কাজের প্রতি ভালোবাসা এইসব কিছু তাকে তার সঠিক লক্ষ্যপথেই নিয়ে গেছে। কোন ধরনের সংকট তাকে আটকিয়ে রাখতে পারেনি। যেমন তিনি ছিলেন আত্মপ্রত্যয়ী, আত্মবিশ্বাসী ঠিক সন্তানকেও তেমনি শিক্ষা দিয়েছেনতাইতো তিনি তার ছেলে ক্রিস্টোফারকে একসময় বলেন,

Don’t ever let someone tell you that you can’t do something,Not even me.You got a dream you gotta protect it.When people can’t do something themselves,They’re gonna tell you that you can’t do it.You want something,Go get it.


কখনো যদি আপনার খুব বেশী খারাপ লাগে নিজেকে  একজন ব্যর্থ মানুষ মনে হয় , এমনকি আপনার মনে বেচে থাকা অর্থহীন এমন প্রশ্নের উদয় হয় তাহলে শেষ সময়ে এই সিনেমাটি দেখার অনুরোধ থাকলো । কি হবে কিংবা কি হতে পারে তা বলতে পারবো না তবে এই টুকু বলতে পারবো দেখার সময় আপনার মনে হবে যেন ইংরেজি ভাষায় আপনি আপনার জীবনের গল্প দেখতেছেন। তাই তো গার্ডিয়ানের Philip French এবং Peter Bradshaw সিনেমাটি নিয়ে যা বলেন তা হলঃ

Philip French :  This is the cinematic equivalent of the most trashy self-help paperback you ever read, The Pursuit of Happyness.
Peter Bradshaw: An old-fashioned Hollywood heart warmer.



দুনিয়ার এই রং মঞ্চে  যখন আপনি জীবন নামের নৌকা নিয়ে ছুটে চলবেন তখন , কখনো ঢেউ এসে আপনাকে তীরে তুলে দিবে আবার কখনো আপনার নৌকা খানি ডুবিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে , কি হবে , কি হতে পারে তা যদি দেখার মন চায় তাহেলে আপনাকে অবশ্যই বেচে থাকতে হবে । জীবন থেকে পালিয়ে যাও সহজ কাজ যা সবাই পারে , কিন্তু দুঃখ কষ্টকে সাথী করে জীবনে কে বয়ে চলাই মানুষের কাজ  । সুন্দর জীবন এবং সুন্দর সকালের আহ্বানে এখানেই রাখি আবার কথা হবে । অন্য কোন দিন , অন্য কোন সময় । 

Comments

Popular posts from this blog

প্রবাহমান জীবন ও কিছু কথা!

"ফরেস্ট গাম্প " একটি অনুপ্রেরণার গল্প, একটি মৃত প্রাণকে তাজা করার সিনেমা

পানাম নগর, আমার এবেলা ওবেলা