পণ্যের দাম নির্ধারণ এবং আমাদের উদ্যোক্তা বিড়ম্বনা


পণ্যের দাম নির্ধারণ নিয়ে কম বেশী অনেকেই ভোগান্তিতে পড়েন । তা ছাড়া বেশ কয়েকদিনে টাইমলাইনে  পণ্যের দাম নির্ধারণ নিয়ে বেশ কয়েকজনের পোষ্ট ঘুরা ঘুরি করছে । তাই এই পোষ্ট লেখা । উৎপাদকের উৎপাদিত পণ্য ভোক্তা বা ক্রেতার নিকট পৌছানোই থাকে একমাত্র লক্ষ্য । আর তার জন্য উৎপাদিত পণ্যের একটা নির্দিষ্টি দাম নির্ধারণ করতে হয় । খুব সাধারণ ভাবে হিসেব করলে দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিশেষ কয়েকটি দিকে লক্ষ্য রাখা হয় । যেমন : উৎপাদিত পণ্যের কাচামালের দাম + উৎপাদন খরচ + অফিস . দোকান / কারখানা মোট কথা ব্যবসার ইনভায়রেন্টমেন্ট খরচ + পণ্য বাজারজাত করণ পক্রিয়া / প্রচার / মার্কেটিং খরচ এই সবের উপর নির্ভর করে । উৎপাদক পণ্য উৎপাদনের পূর্বে তাকে ঠিক করে নিতে হয় , তার উৎপাদিত পণ্যের ভোক্তা / ক্রেতা কারা ? এই বিষয়ের উপর নির্ভর করেই সে তার পণ্য বাজারজাত করে থাকে । অনলাইনের এই যুগে এসে প্রতিদিন নতুন নতুন বিক্রেতা / উদ্যোক্তা বাড়ছে । যার মধ্যে অনেকেই মার্কেট সর্ম্পকে কিংবা তার ক্রেতা সর্ম্পকে জ্ঞান রাখে না । এবং যার কারণে কয়েকদিন পরেই লসের ঘাটি টানতে না পেরে তাদের ব্যবসা ঘুটি নিতে হয় । একজন বিক্রতার প্রথম কাজ যদি থাকে তাহলে আমার মনে বাজার সর্ম্পকে জানা , সাথে তার পণ্যের ক্রেতা করা এই বিষয়টি নিশ্চিত করা । যখনই এই বিষয় গুলো তার জানা থাকবে তখন তার প্রচার / মার্কেটিং করতে সহজ হবে । একই সাথে লসে সম্ভবনা ও কম থাকে । বর্তমানে ভোক্তা অধিকার আইন আছে । যার মাধ্যমে ভোক্তার নিকট হতে নির্ধারিত মূল্যের থেকে বেশ দাম নিলে সে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবে । চলুন এই বার একটু পণ্যের দাম নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা করি । যখনই আপনি নিজেকে ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইবেন তখনই আপনাকে আগে আপনার পণ্যের কাষ্টমার কারা এই বিষয়টি জানতে হবে এবং ঠিক করতে হবে । কখনই একটি দেশে কিংবা সমাজের সকল মানুষ আপনার কাষ্টমার এই ধারণা করা ভূল । ধরুণ আপনি টি-শার্ট বিক্রয় করেন । যেখানে বাজারে বর্তমানে টি-শার্টের দাম গড়ে ৩৫০ টাকা । কিন্তু আপনার পণ্য উৎপাদন করতেই খরচ হয়ে যায় ২৫-২৮০ টাকা । তার সাথে আপনার পণ্য প্রচারের খরচ + কর্মচারী + অন্যান্য খরচ তো আছেই । তাহলে বলা যায় নিসন্দেহে এই পণ্য আপনার জন্য লস বয়ে আনবে । এর থেকে কম খরচে পণ্য উৎপাদন করলে পণ্যের মান খারাপ হয়ে যাবে । ভোক্তার সন্তুষ্টির জন্য যেমন আপনাকে পণ্যের মানের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে , ঠিক তেমননি ভাবে বোক্তার নিকট সহজ উপায়ে পণ্য পৌছানোর দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে । কারণ ভোক্তার সন্তুষ্টিই আপনার ব্যবসার সুফল বয়ে আনবে । ঠিক একই ভাবে আপনার ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হলে , আপনাকে লাভ করতে হবে । কারণ আপনি তো আর লস দিয়ে ব্যবসা করবেন না ?  এর জন্য আপনাকে কাষ্টমার নির্ধারণ করতে হবে । তার উপর নির্ভর করে আপনি পণ্য বাজারে নিয়ে আসেন , দাম ঠিক করেন । এই দেখুন =  ১ কেজি আলু ২০ টাকা । কিন্তু কেউ ওই টাকে আলুর চপ করে বিক্রয় করছে । তাতে করে তার প্রতি কেজি ১০০ টাকা পড়ছে । আবার কেউ ফ্রেন্জ ফ্রাই করে কেউ বা চিপস = এক প্যাকেট চিপসের দাম ১০ টকা া২৫ গ্রাম থাকে । তাহলে ১ কেজি চিপসের দাম ৪০০ টাকা । বিষয়টি দাড়ালো এক কেজি আলু ৪০০ টাকা এখন আপনি যদি কোন কাষ্টমারকে বলেন যে এক কেজি আলুর ৪০০ টাকা শিউর ওই কাষ্টমার আপনাকে মেরে কাত করে দিবে । একটু ভিন্ন ভাবে পণ্য বাজরে নিয়ে আসলে / পণ্যের বাজার জাত করলেই হয় , যদি আপনার বাজার এবং ক্রেতা সর্ম্পকে ধারণা থাকে । তাতে করে ক্রেতাও খুশী , আপনি ও লাভবান । চলুন আরেকটি বিষয় সর্ম্পকে জেনে আসি ...

আচ্ছা বলুন তো এক বোতল পানির দাম কতো হতে পারে ? খাওয়ার পানি ? ২০ টাকা ,৩০ টাকা , ৫০ টাকা , একবারে বেশী হলে ১০০ টাকা এই তো ? কিন্তু যখন এক বোতল পানির দাম ৪৮ হাজার টাকারও বেশী হয় তখন ? না চোখ কপালে নেওয়ার কোন কারণ নেই । অবশ্য আমিও নিয়েছি । এক বোতল পানির দাম এতো টাকা...? হ্যাঁ এতো টাকা । প্রথম যখন এই কথাটা শুনি তখন বিশ্বাস হতে একটু সময় নিয়েছে । ঠিক আপনার মতো ।  এক বোতল পানির এতো দাম , গুগল সার্চ দিলাম , পড়তে শুরু করলাম । পড়তে শুরু করলাম । হ্যাঁ বিষয়টি সত্য । এক বোতল পানির দাম ৬০ হাজার ডলার । কি আছে এই পানিতে ? যখনই গভীরে যেতে লাগলাম তখন দেখলাম খুব বেশী কিছু নেই । এই পানি মিনারেল ওয়াটারই । কিন্তু এর বোতল হচ্ছে সোনার তৈরি । নাম Acqua-Di-Cristallo  । অন্যান্য পানির মতো এটিও খাবার পানি , কিন্তু এই পানির বোতল তৈরি হয়েছে ২৩ ক্যারেট সোনা দিয়ে । অতঃপর বুজতে পারলাম , দাম পানির না , দাম হচ্ছে সোনার । কিন্তু বিক্রয় হচ্ছে পানি বলে । কেউ সোনাকে সোনা হিসেবেই বিক্রয় করে আবার কেউ পানি । 


তাদের ও ক্রেতা আছে । আবার আমাদের প্রাণ কোম্পানীর ও ক্রেতা আছে । যাদের লক্ষ্য যেমন সেই হিসেবেই ক্রেতা সিলেক্ট করা । আমাদের কয়েকটি ভুলের মধ্যে প্রধান ভূল ক্রেতা সিলেক্ট করা । আর সেই করাণেই প্রতিদিন যে হারে ব্যবসায়ী বাড়ছে ঠিক তার উল্টো হাতে ব্যবসায়ী হারিয়ে যাচ্ছে । এখন আপনার টি-শার্ট ৩৫০ টাকা দাম ঠিক না করে আপনি ৫৫০ করে দেন । তার জন্য আপনি যেটা করতে পারেন । হয়তো অনেকেই বলবেন , যে যেখানে বাজারে ৩৫০ টাকার টি-শার্টই চলেনা ওখানে ৫৫০ !! তাদের বলবো , বাংলাদেশেও হাজার টাকার উপরের দামে টি-শার্ট বিক্রয় হয় । একই পণ্য কিংবা একই প্যাকেট , একই পক্রিয়াতে আপনি যদি পণ্যের দাম বৃদ্ধি করেন তাহলে যে বিষয়টা হবে , প্রথম দিকে কাস্টমার পেলে ও পরে একটা সময় হারাবেন । কারণ দাম অনুযায়ী আপনার সেবা কিংবা পণ্যের মান কোনটাই ভালো না । কাস্টমার আপনাকে / আপনার প্রতিষ্ঠান নিয়ে খারাপ রিভিউ দিবে আর সেটা নিসন্দেহে আপনার জন্য খারাপ, আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য খারাপ । তাহলে যেটা করতে হবে । আপনাকে পণ্যের গুণগত দিকে আরো একটু নজর দিতে হবে , এবং কাষ্টমারের কাছে পণ্য উপস্থাপনের পক্রিয়াটা একটু পিরিবর্তন করতে হবে । ঠিক ভুট্টার খই ( popcorn )  এর  মতো । দেখুন , রাস্তায় বাসে একই জিনিস বিক্রয় হয় , প্যাকেট ১০ টাকা করে । আর বড় বড় মার্কেট , হোটেল কিংবা সিনাপ্লেক্স গুলোতে বিক্রয় হয় ১৪০ থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত । রাস্তায় একটা সাদা পলিতে করে বিক্রয় করে , এবং তার টার্গেট কাস্টমার আম জনতা । আর সিনাপ্লেক্স গুলোতে একটা পেপার এর ঠোংঙ্গাতে করে দেয় , যাদের টার্গেটেড কাস্টমার একটু উচু শ্রেণীর মানুষ । অবশ্যই পণ্যের মানের কিছুটা পরিবর্তন আছে । কিন্তু খুব একটা না । জাস্ট বাজার জাতের পক্রিয়াটা ভিন্ন । কাষ্টমার ভিন্ন । সর্বাপরি একটি কথাই , কাস্টমার / ক্রেতা / ভোক্তা যাই বলিনা কেন , আপনি যে শ্রেণীকে লক্ষ করবেন , তাদের চাহিদা , তাদের জীবন যাপন  , এই সবের উপর নির্ভর করে পণ্য উৎপাদন , বাজারজাত করেন , এবং দাম নির্ধারণ করেন । 


বি:দ্র : খুব সহজ ভাষায় বুজাতে চেয়েছি । হয়তোবা অন্যরা আমার থেকেও একটু বেশী জানেন । কিন্তু ভুল হরে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি । আর সব কিছু মুক্ত মঞ্চে বলা সম্ভব না । প্রাইরেসি বলতে একটা শব্দ আছে । আপনাদের সময় নষ্ট করার জন্য আবার ও ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি । ভালো থাকবেন । আর ওহ আবার ও বলছি । ব্যবসায় নামার পূর্বে , বাজার , কাস্টমার এই দুটো বিষয় রিচার্স করে , জেনে বুজে ঠিক করে নামুন , অন্তত আর যাই হোক ব্যবসা গুটিয়ে পালাতে হবে না ।  ভালো থাকবেন সবাই । 

Comments

Popular posts from this blog

প্রবাহমান জীবন ও কিছু কথা!

"ফরেস্ট গাম্প " একটি অনুপ্রেরণার গল্প, একটি মৃত প্রাণকে তাজা করার সিনেমা

পানাম নগর, আমার এবেলা ওবেলা