আমার ই-কর্মাসের দিন গুলো - পর্ব : ০৩ ,
প্রথম এবং দ্বিতীয় এই দুইটা পর্ব এলো মেলো ভাবে লেখেই শেষ করেছি । ওখান থেকে কে কি পেয়েছেন জানি না । আর আমি কখনই বলতে পারবো না যে আপনাকে গোটা ই-কমার্স সর্ম্পকে বুঝেয়ে দিবো । কিংবা আমি ই-কমার্সের মহাজ্ঞানী এই কথাটুকু আমার মুখে আসবে না ।আমিও আপনার মতো শিখছি । এখনো শিখার চেষ্টায় আছি । এক কথায় আমি একজন ছাত্র । আপনার আর আমার মাঝে তেমন পার্থক্য নেই । ছোট একজন মানুষ , ব্লগ পড়ে , টিউটরিয়েল দেখে , লোক মুখে শুনে , আপনাদের সাথে কথা বলে যা শিখতে পেরেছি তাই বলছি । ইকর্মস কি , কেন , কোথা থেকে আসলো , এই সব আর বলার প্রয়োজন মনে করি না । কারণ সবাই ্ বিষয়টা সর্ম্পকে জানে । সরাসরি কাজে চলে যাই । প্ল্যান প্রোগরাম সব কিছু হয়ে গেছে যে আপনি একটা ই-কমার্স সাইট করবেন । মানে আপনি অনলাইন ব্যবসা করবেন । প্রথম কাজ
বিনিয়োগ নির্ধারণ :
আগের পোষ্টে বলে এসেছি ব্যবসার কয়েকটি বিষয় বস্তুর মধ্যে একটি হলো , অর্থের সঠিক ব্যবহার । এই বার আসি আমরা যেহেতু ব্যবসা করবো তাহলে তার জন্য একটা মুলধন নির্ধারণ করা । আমরা মোট কতোটাকা নিয়ে ব্যবসায় নামবো । অনেকেই আছে যে বলে ভাই এইটার কোন হিসাব নেই । এই কথা বললে আমি বলবো ভাই আপনার জন্য ব্যবসা নয় । কারণ প্রতিটি ব্যবসার একটা র্নিারিত মুলধন থাকা আবশ্যক । তা না হলে আপনার হিসেব রাখতে সমস্যা হবে । প্রয়োজনে পরে তার পরিমান বৃদ্ধি করেন কিন্তু প্রথমে একটা নির্দিষ্ট বিনিয়োগ ঠিক করুন । তারপর কোন খাতে কেমন অর্থ খরচ করবেন তা ঠিক করুন । কতটুকু অর্থ ব্যায় করবেন , আর তা কিভাবে ম্যানেজ করবেন । তা ঠিক করুন । বাকি অর্থ আপনার ব্যবসায়িক এ্যাকাউন্টে জমা রাখুন । সব টাকা একবারে খরচ না করাই ভালো ।বাফেট এর উক্তিটি মনে রাখন " সব ডিম এক ঝুড়িতে না রেখে ভিন্ন ভিন্ন ঝুড়িতে রাখুন "
এইবার একটি সুন্দর নাম ঠিক করুন :
নাম চোট হলে ভালো কারণ তাতে আপনার কোম্পানী ব্রান্ডিং করতে সুবিধা । তবে অবশ্যই তা অর্থবহ হতে হবে । ই নাম দিয়েই আপনি যেমন ফ্যান পেইজ খুলবেন আবার এই নাম দিয়েই ডোমেইন মেন রেজেস্ট্রেশন করতে পারেন। নাম ঠিক করার সময় অবশ্যই আপনার প্ল্যানিং এর কথা মাথায় রাখবেন । আপনি কোন প্রোডাক্ট বিক্রয় করবেন । কারণ যাতে করে মানুষ আপনার কোম্পানী / ওয়েব সাইটের নাম শুনেই বুঝতে পারে কোম্পানীর ধরণ ।
পেমেন্ট সিস্টেম :
এইবার আপনি ঠিক করে নিন , একজন কাস্টমার আপনার কাছ থেকে যে পণ্য ক্রয় করবে , সে কিববে পেমেন্ট করবে ? পেমেন্ট সিস্টেম খুবই জরুরী । ই-কমার্সের জন্য । এমন সিস্টেম রাখুন যাতে কাস্টমার সেটিসফিকশন এর সাথে সাথে আপনার ও সুবিধা হয় । কেন না ব্যবসা টা আপনার । তাছাড়া ফ্রড কাস্টমার ও আছে বাজারে । সুতরাং এই বিষয় গুলো মাথায় রেখেই পেমেন্ট সিস্টেম ঠিক করুন ।
ডেলিভারী সিস্টেম :
বর্তমান ই-কমার্স সেক্টরের প্রধান এবং মূল সমস্যা হলো ডেলিভারী । কারণ কুরিয়ার গুলো ঠিক মতো পণ্য ডেলিভারী করে না । সেই সাথে পণ্যের দাম ও ঠিক ভাবে দিতে চায় না । সব মিলিয়ে এক প্রকার ঝামেলা পোহাতে হয় শপ মালিক দের । মার্কেট দেখে একটা ভালৌ কুরিয়ার এর সাথে চুক্তি করুন । একই সাথে একটি কথা মনে রাখবেন কখনই কাস্টমারকে ২৪ ঘন্ট সময় দিয়ে ৪৮ ঘন্টায় ডেলিভারী করবেন না । বরং ৪৮ ঘন্টা সময় নিয়ে ২৪ ঘন্টায় দেওয়ার চেষ্টা করুন । তাহলে দেখবেন কাস্টমার খুশী হয়ে আপনার কোম্পানীর প্রচার করবে । আর সেটা আপনার জন্য অনক বড় পাওয়া এবং লাভ । সুতরাং প্রয়োজনে কাস্টমার থেকে একটু সময় বেশী নিন ।
কাস্টোমার সার্ভিস:
এই সেক্টর টা অত্যন্ত জরুরী একটা সেক্টর । কেননা আপনি যত দ্রুত এবং সহজে কাস্টমারকে আপনার কোম্পানীর বিষয় বস্তু বুঝাতে সক্ষম হবেন । কাস্টমার তখনই আপনার প্রতি আকৃষ্ট হবে । কাস্টমার সার্ভিস এর জন্য একটা সুন্দর ফোন নাম্বার ঠিক করুন । কোন কাস্টমার কল করলে সুন্দর ভাবে , একটা নিরবিলী পরিবেশে থেকে কথা বলুন । আর প্রথম ১০ সেকেন্ডের মধ্যেই কাস্টমারকে আপনার আইডেন্টিটি দিয়ে দিন । যাতে করে কাস্টমার প্রশ্ন করার সুযোগ না পায় যে আপনি কে বলছেন ?
কাস্টমারকে আপনার পণ্য সম্পৃক্ত সঠিক তথ্য দিন । একই সাথে আপনার ফ্যান পেইজ কিংবা ওয়েব সাইটে যেকোন প্রশ্ন আসুক না কেন , দ্রুত সময়ের মধ্যে দেওয়ার চেষ্টা করুন । তাহলে কাস্টমারের কাছে একটা বিশ্বস্ততা পাবেন । আর সে আপনার পণ্য বা সেবা নিতে আগ্রহী হবে ।
পণ্য ডেলিভারীর পরও পুনরায় একবার কাস্টমারের সাথে কন্টাক্ট করুন । যাকে আমরা আফটার সেল সার্ভিস বলে থাকি । এই মাধ্যমে আপনার রির্টান কাস্টমার তৈরি হবে । সব সময় কাস্টমার সার্ভিস উন্নত করার চেষ্টা করুন । পারলে কল সেন্টারে যাকে বসা বেন একটু দেখে নিবেন তার ভয়েজ টোন কেমন ।
প্রচারণা :
অনেকেই হয়তো বলবেন আমি প্রচারণাকে এতো টা আগে নিয়ে আসলাম কেন ? আপনার কাছে আগে মনে হলেও আামর কাছে মনে হয়েছে ঠিকই আছে । এখন পর্যন্ত আমাদের নাম ঠিক করা হয়েছে । পেমেন্ট, ডেলিভারী সিস্টেম ঠিক হয়ে গেছে । যেহেতু নাম ঠিক হয়ে গেছে সুতরাং আপনি একটা ফেইসবুক সহ কয়েকটি স্যোস্যাল মিডিয়ায় ফ্যান পেইজ খুলে প্রচারণা শুরু করে দিন । তার পূর্বে অবশ্যই ডোমেইনটা নিজের নাম কিনে নিবেন । পরে না হয় দেখবেন ডোমেইনটা অন্য কেউ নিয়েছে । তখন বড় প্রকারের ঝামেলায় পড়তে হবে আপনাকে । তাই বলবো আগেই ডোমেইনটা কিনে নিন । এইবার আপনি একটু একটু করে প্রচার শুরু করুন ।
ওয়েবসাইট :
নিজে না পারলে একজন ভালো ওয়েব ডিজাইনার / ডেলপারকে দিয়ে সুন্দর দেখে একটি ওয়েব সাইট করে নিন । সিএমএস নিয়ে কিছু বলার নেই । কারণ আপনি যেটায় ভালো বুঝবেন , কিংবা আপনার ইউজার যেটা ফ্রেন্ডলি ইউজ করতে পারবে সেটাই নির্বচন করুন । তবে বর্তমানে , ওর্য়াডপ্রেস , জুমলা, ওপেনকার্ট, সহ বেশ কিছু সিএমএস আছে ।
হোস্টিং :
একটি ভালো কোম্পানীর কাছ থেকে হোস্টিং সার্ভিস নিন । নেওয়ার সময় হোস্টিং সর্ম্পকে অবশ্যই জেনে নিবেন । ডাউন টাইম কতোক্ষণ, মেইল সার্ভিস কেমন , ব্যাক আপ আছে কিনা । যা যা প্রয়োজন হয় । আমি খুব ভালৌ ভাবে বলতে পারি নি , যদিও আপনি আমার থেকে ভালো জানেন ।
ইউজার ফ্রেন্ডলী ইন্টারফেস
যেহেতু আপনি ওয়েব সাইটি ইউজারের জন্য বানিয়েছেন তাই সেটা অবশ্যই ইউজার ফ্রেন্ডলি হতে হবে । ইউজার যাতে সহজে আপনার ওয়েব সাইট ভিজিট করতে পারে । এবং কেনা কাটা করতে পারে , সেটা দেখার দ্বায়িত্ব আপনার । এটা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে ইকমার্স ওয়েবসাইটের জন্য একটা ইউজার ফ্রেন্ডলী ইন্টারফেস সবচেয়ে দরকারী। তাই সাইটের ডিজাইন করার ক্ষেত্রে যতটা সম্ভব ইউজার ফ্রেন্ডলী করে তৈরি করার চেষ্টা করুন। সেই সাথে আপনার ওয়ব সাইটটি সার্চইঞ্জিনে দ্রুত খুঁজে পাওয়ার জন্য করতে হবে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন বা এসইও এর কাজও।
এইবার আপনি আপনার ওয়েব সাইট এবং ব্যবসা নিয়ে পুরো ধমে প্রচারণা শুরু করুন । মনে রাখবেন কাস্টমার সন্তুষ্টিই আপনার ব্যবসার মূল লক্ষ্য । কাস্টমার সন্তুষ্ট থাকলে আপনার ব্যবসা ও ভালো হবে ।
আজ এই পর্যন্তই ভালো থাকবেন সবাই । পরবর্তী পোষ্টের অপেক্ষায় থাকুন । আবারও বলবো
ই-কমার্স অধ্যায়নং তপঃ ( অধ্যায়নই ই-কমার্সের তপস্যা)
ছবি সুত্র : ইন্টারনেট
Comments
Post a Comment