পানাম নগর, আমার এবেলা ওবেলা

শরীর অসুস্থ থাকলে ডাক্তার কিংবা হাসপাতাল । আর মন অসুস্থ থাকলে ?
এমন প্রশ্নে খুব সহজ ভাবে আমি বলি , বন , জংঙ্গল , পাহাড় , নদী কিংবা পুরানো কোন বাড়ি, মানে প্রাচীন নগরী । কম বেশী আমাদের সবারই মন খারাপ হয় । চলুন ঘুরে আসি শহরের পাশেই পানাম নগর থেকে । ব্যস্ততম শহর থেকে বেরিয়ে একটু কাটিয়ে আসি কিছু সময় । চাইলে চলে যেতে পারেন , খরচ খুব বেশী না । কিন্তু ঘুরে আসতে পারেন , পানাম নগর থেকে । কিছু সময়ের জন্য হলেও নিজেকে জমিদার ভাবতে পারেন চাইলে ( যেটা আমি করি ) ।

প্রাচীন নগরী সোনারগাঁও

নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁওয়ে অবস্থিত প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন শহর পানাম নগর৷ ১৫ শতকে ঈসা খাঁ বাংলার প্রথম রাজধানী স্থাপন করেছিলেন এই সোনারগাঁওয়ে৷ কয়েক শতাব্দী পুরনো অনেক ভবন সমৃদ্ধ এই পানাম নগর এখন ধ্বংসের প্রহর গুনছে৷

যা আছে পানাম নগরে

প্রায় ৫ মিটার চওড়া এবং ৬০০ মিটার দীর্ঘ একটি সড়কের দু’পাশে সুরম্য কিছু স্থাপনা নিয়ে পানাম নগর গড়ে ওঠে৷ সড়কের উত্তর পাশে ২১টি এবং দক্ষিণ পাশে ৩১টি, মোট ৫২টি বাড়ি এই নগরের অন্যতম আকর্ষণ৷



টাকা , সময় , সুযোগ সব মিলিয়ে শেষ কয়েক মাস ঘুরা বলতে প্রয়োজন আর বাসার পাশের টং দোকান কিংবা টিএসসি । এই টুকুই আমার ঘুরার পথ । কিন্তু কানের কাছে যদি পানাম পানাম করে কেউ শব্দ করে , তখন কি আর না গিয়ে উপায় আছে ? হ্যাঁ এমনটাই করে যাচ্ছে , মেহজাবিন । এই দেখ তাকে তো আপনারা এখন চিনেন নাই , বোন বন্ধু কাছের দুরের সব প্রকার মানুষ । যাই হোক তার বেশী কিছু বললাম না । অতঃপর সিদ্ধান্ত পানাম নিয়ে যাবো । নিয়ে যাবো মানে আমি পূর্বেও কয়েকবার গিয়েছি । আগের দিন সিদ্ধান্ত পরের দিন যাত্রা । রাতে ঘুমাইনা , সাধারণত ঘুমটা সকালেই হয় , কিন্তু সেদিন আর হলো না । সকাল ৮টায় বাসা ত্যাগ করলাম পানাম এর উদ্দেশ্যে ,  বাসা থেকে বের হয়ে গুলিস্তান । রিকশায় করে , (যদিও এই কাজটি করতে গিয়ে ভালোই ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে , কিন্তু ঘুরে আসার পর মনে না থাকায় বলতে পারলাম না ) । গুলিস্তানের একটি হোটেলেই সকালের নাস্তা সেরে , সোনারগাঁ এর বাস । বোরাক কে ধন্যবাদ , এসি বাস চালো করার জন্য । এই গরমে ৫৫ টাকায় সোনারগাঁ সার্ভিস ভালো , রেটিং দিতে হলে ১০/১০ দিবো । বাসে বসেই একটা ছোট খাটো ঘুম । ঘুম না পুরতেই পানাম (মনে মনে বললাম আরো একটু সময় দিতে পারতেন , ঘুমটা ভালোই ছিলো ) । যাই হোক সোনারগাঁ নেমে রিকশায় করে , জাদুঘর । ভাড়া ১০ টাকা যদিও আমাদের কাছ থেকে ৩০ টাকা নিছে । জাদুঘরের টিকেট ২০ টাকা করে । জাদুঘরে ডুকে এই দিক ওই দিক ঘুরা ঘুরি , দেখা ।

বড় সর্দার বাড়ি


লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর

বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য রক্ষার্থে সোনারগাঁওয়ে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর৷ এ জাদুঘরের প্রবেশ পথে শিল্পাচার্যের কালজয়ী তৈলচিত্র ‘সংগ্রাম’ অবলম্বনে একটি ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়েছে৷ এটির স্থপতি শিল্পী মো. কাইয়ুম৷


বড় সর্দার বাড়ি




জাদুঘর দেখা শেষে বের হলাম । ফাইল বারি হয়ে যাবে তাই আর ছবি দিতে পারলাম না । বের হয়ে আবার রিকশায় জন প্রতি ১০ টাকা করে পানাম নগরের দিকে ছুটা । পানাম নগরের প্রবেশ টিকেট ১৫ টাকা । 
এই দিক ওদিক ঘুরা ঘুরি , ছবি তোলা । লাল চায়ের সাথে আড্ডা , কিছু ক্ষণ মন দিয়ে প্রাচীন ধংসের পথে ধাবিত হওয়া দালানের সাথে কথা বলা । 

পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় পানাম নগর

সরকারের অবহেলা থাকলেও পর্যকদের কাছে জনপ্রিয় এই পানাম নগর৷ প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে কয়েকশ’ মানুষ প্রাচীন এই শহরটি দেখতে আসেন৷

দাঙ্গায় ক্ষতির শিকার পানাম

১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় হিন্দু ব্যবসায়ীদের এই বসতিতে লুটেরারা দরজা-জানালাসহ অনেক কিছুই লুটে নিয়ে যায়৷ যুদ্ধের সময় বহু হিন্দু ব্যবসায়ী ভারতে পাড়ি জমালে পানাম প্রায় জনমানবহীন হয়ে পড়ে৷ বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর মূল্যবান এ বাড়িগুলো বসবাসের জন্য ১০-১৫ বছরের ইজারা দেয়া হয় এবং পরে তা নবায়নও করা হয়৷





না আর নয় । এইবার যাই । পেটে ক্ষুদা আছে অনেক , পানাম নগরীর আড্ডা শেষ , এইবার খাবারের সাথে প্রেম , পূর্বে কয়েকবার যাওয়ার কারণে জানা আছে সামনের হোটেল গুলোতে খাওয়া আর পকেট রেখে টাকা দিয়ে দেওয়া সমান । তাই সোজা সোনারগাঁও চৌরাস্তা । একটা হোটেলে প্রবেশ , বসা । খাবার অর্ডার করা , আর খেতে শুরু করা । সব কিছুই ভালো ছিলো , ডালটা ফ্রি ছিলো তো তাই ওইটা ভালো না , তারাও প্রমাণ করলো যে ফ্রিতে আরাম / স্বাদ নাই । যাই হোক অল্প টাকার মধ্যে যদি কেউ ঘুরার চিন্তা করেন তাহলে লিস্টে পানাম নগরীর নাম রাখতে পারেন । যাতায়াত গুলিস্থান থেকে এসি বাস ৫৫ +৫৫ =১১০ যাওয়া আসা ।
সোনারগাঁও থেকে রিকসায় ১০টাকা করে (বেশী চাইতে পারে , কিন্তু দাম করে উঠবেন )
জাদুঘরের টিকেট = ২০ টাকা (কমানোর সুযোগ না থাকলেও বাড়ার আছে )
পানাম নগরীর টিকেট ১৫ টাকা (একই হাল , জাদুঘরের মতো )
খাবার এর বিষয় কিছু বলার নাই , কারণ সেটা আপনার উপর নির্ভর করবে । যেটুকু খেতে পারেন , কিংবা কেমন খাবেন । 

দিন শেষে যখনই বাসায় ফিরি তখনই মনে হয় আরো কিছুক্ষণ থাকলেই পারতাম । কিন্তু মিশন তো আর একটা না । আর এতোটা সময়ও নাই । তবে যাই হোক , ধন্যবাদ মেহজাবিনকে যাওয়ার জন্য পাগল করে দিসস তাই । না হলে হয়তো স্মৃতির ডায়রীর এই একটা পাতা খালি থেকে যেতো । 


Comments

Popular posts from this blog

প্রবাহমান জীবন ও কিছু কথা!

"ফরেস্ট গাম্প " একটি অনুপ্রেরণার গল্প, একটি মৃত প্রাণকে তাজা করার সিনেমা