চলচ্চিত্রের পরিবর্তন , নতুনত্বের চাপ

বর্তমান চলচ্চিত্রে অনেক পরিবর্তন এসেছ । অনেকেই বলছে , নিউজ পেপার গুলো ও বড় বড় ছাপা অক্ষরে তা প্রকাশ করছে । যদিও এটা নতুন কিছু না । তবে কতোটুকু পরিবর্তন এসেছে ? একটু পিছনের দিকে তাকালেই দেখা মিলবে তার । ত্রিশ দশকের ছবি আর পঞ্চাশ দশকের ছবি গুলোর দিকে লক্ষ্য করলেই পরিবর্তনের , নতুনত্বের একটা প্রমাণ মিলবে । সেই সাথে এই পরিবর্তন যে প্রথম না , তার ও প্রামণ পাওয়া যাবে । সময়ের সাথে তাল মিলেয়ে চলতে গিয়ে পৃথিবীর সব কিছুরই পরিবর্তন হয় , একটা সময় পর পর এই পরিবর্তন হয় । তারই ধারাবাহিকতায় চলচ্চিত্রে ও মিলে পরিবর্তনের চাদর । তবে হ্যাঁ এখনকার চলচ্চিত্রের পরিবর্তনটা একটু বেশী মনে হচ্ছে ।
একটা সময় পরিচালক অনেক ভেবে সিনেমায় হাত দিতেন আর এখন একটা গল্প আর মোটামুটি টাকা হলেই সিনেমা হয়ে যায় । লেখাটা কাউকে ছোট করার জন্য লিখিনি । শেষ কিছু ছবি দেখে মনে হলো । কারণ যে কোন সিনেমার দুটা দিক থাকে । হয় গল্প না হয় মেকিং । কিন্তু তাদের কাছ থেকে কোনটাই পাইনি ।
ছবিতে স্বামী-স্ত্রীর মিলন দেখানো কিংবা প্রেমিক-প্রেমিকার অন্তরঙ্গ দৃশ্য দেখানোটা এখন অনেক সহজ হয়ে গেছে । কিছু কিছু দৃশ্য দেখলে মনেই থাকে না যে একটা সময় এই দেশে পুরুষদের কে নারী সেজে তার অভিনয়টি করতে হতো । হ্যাঁ আরো বেশী কিছু দেখানো যায় , যদি সেটা গল্প চায় , গল্পের প্রয়োজনে আপনি অনেক কিছু করতে পারেন । কিন্তু যখন কিছু কিছু পরিচালক মনে করেন এই রকম খোলামেলা দু-একটা দৃশ্য না থাকলে সেটা যুগ উপযুগী হয়না , তখন সেইটা মেনে নেতি পারি না । আর এইটাকে সম্ভল করে সমালোচকরাও একটা ভালো সময় কাটাতে পারেন । বলতে পারেন দু-একটা কথাও । ছবিতে আইটেম গানের একট ধুম পড়ে গেছে । ছবি মানেই আইটেম গান । ওইটা না থাকলে নাকি ছবি রসহীন হয়ে পড়ে , কথাটা আমার না , এক ভিঙ্গ পরিচলক মশাইয়ের । বিষটাকে কেন জানি মেনে নিতে পারছি । এই ক্ষেত্রেও সেই একই কথা বলবো গল্পের প্রয়োজন , যদি গল্প আইটেম গান চায় তাহলে ঠিক আছে , কিন্তু বাড়তি বিনোধন দেওয়ার জন্য দিয়ে থাকেন , তাহলে বলবো সেটা না দেওয়াই ঠিক । কারণ এতে দর্শক বিরক্ত হয় । বিনোদন পায় না ।বাড়তি আনন্দ দিবে তার জন্য দিলেন সেটা মানতে পারলাম না ।
আমাদের অনেক চিন্তা , দর্শক কি নিবে না নিবে , আরো কতো কি । চিন্তা হবার ই কথা , কারণ টাকা পয়সার বিষয় চিন্তা করতেই হবে । কিন্তু যদি আপনি চিন্তা করেনে যে এই গুলো দর্শক নেয় না , ওই গুলো দর্শক নেয় না , তাহলে হবে না । দর্শক কোন গুলো নেয় সেটা চিন্তা করেন । আর সব থেকে বেশী চিন্তা করেন দর্শক কিভাবে নিতে পচন্দ করে । ৬০ কি ৮০ দশকের দিকের ভাবনা ছিলো এমন , দর্শক নিবে এমন কিছুই আমাকে তৈরি করতে হবে । কিন্তু এখন আর বোধ হয় সেই ভাবনা নেই , এইটা ভালো দিক , কিন্তু তাই বলে আপনি বাসি পচা দিবেন তা দর্শককে নিতে হবে , আর না নিলে বড় চেয়ারে বসে গালি দিবেন , আর বড় গলায় বলবেন এই দেশে দর্শকরা সিনেমা হলে যায় না , আর আমাদের পত্রিকা গুলো সেটা বড় বড় অক্ষরে ছাপাবে । কি কান্ড কি কান্ড ?
আচ্ছা আপনাকে একটা কথা বলি , আপনি তো ডান হাতে ভাত খান তা্ না ?
ভাত আমাদের প্রধান খাদ্য , এইটা ছাড়া চলেই না , যতোই অন্য কিছু খাই না কেন ।
মনে করেন আপনার মহল্লায় একটা রেস্টুরেন্ট খোলা হয়েছে , যেখানে ভঅত নেই , তার উপর ওখানে ডান হাতে নয় আপনাকে রুটি খেতে হবে তাও বাম হাতে , আপনি যাবেন ?
অবশ্যই না , আমি যাবো না , আপনার টা জানি না । আর যদি এমনটা হয় আপনি কখনই রুটি খান নাই , ডান হাত বাম হাতের যে বিষয়টা ছিলো সেটা নাই , তাহলে অন্তত একদিন হলেও আমি যাবো , দে রুটি খেতে কেমন তার স্বাদ নেওয়ার জন্য । সুতরাং আপনি যাই দেন না কেন , আপনার গল্পটা যাই হোক , আপনি যদি দর্শক কিভাবে নিতে পচন্দ করে সেই দিকে খেয়াল রেখে নির্মাণ করেন , তাহলে দর্শক নিবেই । আর যদি আপনি গু-গোবর একটা নিজের মতো করে বানিয়ে নিয়ে আসেন , তাহলে দর্শকের ও এতো ঠেকা পড়ে নাই , যে নিজের সময় এবং টাকা নষ্ট করে আপনার এই সব দেখবে ।
এখনও আমাদের নির্মানে অনেক ঘাটতি আছে , আগে আমাদের নির্মাণ ঠিক করতে হবে । তারপর দর্শক , আর হল, ভালো ছবি , দর্শক দেখবেই , আর দর্শক বাড়লেই হল সংখ্যা বাড়বে ।
সিনেমাতে পরিবর্তন এসেছে , আমরা একটু বেশী পরিবর্তন হয়ে গেছি । তা ঠিক করতে হবে । দরকার হলে আবার একটু পিছিয়ে যাবো । তার পর না হয় সামনে ।

Comments

Popular posts from this blog

প্রবাহমান জীবন ও কিছু কথা!

"ফরেস্ট গাম্প " একটি অনুপ্রেরণার গল্প, একটি মৃত প্রাণকে তাজা করার সিনেমা

পানাম নগর, আমার এবেলা ওবেলা