জামদানি কথা
ইতি কথা :
কার্পাস তুলা দিয়ে প্রস্তুত একধরনের পরিধেয় বস্ত্র। প্রাচীনকানের মিহি মসলিন কাপড়ের উত্তরাধিকারী হিসেবে "জামদানিশাড়ি বাঙ্গালী নারীদের অতি পরিচিত। মসলিনের উপর নকশা করে জামদানি কাপড় তৈরি করা হয়। জামদানি বলতে সাধারণতঃ শাড়িকেই বোঝান হয়। তবে জামদানি দিয়ে নকশী ওড়না, কুর্তা রুমাল, পর্দা প্রভৃতিও তৈরি করা হত। ১৭০০ শতাব্দীতে "জামদানি দিয়ে নকশাওয়ালা শেরওয়ানির প্রচলন ছিল। এছাড়া, মুঘল নেপালের আঞ্চলিক পোষাক রাঙ্গার জন্যও জামদানি কাপড় ব্যবহৃত হত।"জামদানির প্রাচীনতম উল্লেখ পাওয়া যায়, আনুমানিক ৩০০ খ্রিস্টাব্দে কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র গ্রন্থে, পেরিপ্লাস অব দ্য এরিথ্রিয়ান সি বইতে এবং বিভিন্ন আরব, চীন ও ইতালীর পর্যটক ও ব্যবসায়ীর বর্ণনাতে। কৌটিল্যের বইতে বঙ্গ ও পুন্ড্র এলাকায় সূক্ষ্ম বস্ত্রের উল্লেখ আছে, যার মধ্যে ছিল ক্ষৌম, দুকূল, পত্রোর্ণ ও কার্পাসী। নবম শতাব্দীতে আরব ভূগোলবিদ সোলায়মান তার গ্রন্থ স্রিল সিলাই-উত-তওয়ারিখে রুমি নামের রাজ্যে সূক্ষ্ম সুতি কাপড়ের উল্লেখ পাওয়া যায়। তার বর্ণনা অনুসারে বোঝা যায়, রুমি রাজ্যটি আসলে বর্তমানের বাংলাদেশ । চতুর্দশ শতাব্দীতে বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বাতুতা বাংলাদেশ পরিভ্রমণ করেন এবং সোনারগাঁও এলাকাস্থিত সুতিবস্ত্রের প্রশংসা করেছেন। যোড়শ শতাব্দীর শেষের দিকে ইংরেজ পর্যটক র্যালফ ফিচ ও ঐতিহাসিক আবুল ফজলও ঢাকার মসলিনের প্রশংসা করেছেন। আরেক ঐতিহাসিক টেলরের জামদানির বর্ণনা দিয়েছেন। তার বর্ণনানুসারে সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে ১০*২ হাত মাপের ও ৫ শিক্কা ওজনের একটুকরা আব-ই-রওয়ান এর দাম ছিল ৪০০ টাকা। সম্রাট আওরঙ্গজেবের জন্য তৈরি জামদানির দাম ছিল ২৫০ টাকা। ১৭৭৬ সাল পর্যন্ত ঢাকায় সবচেয়ে উৎকৃষ্টমানের জামদানির মূল্য ছিল ৪৫০ টাকা। সময়ের সাথে "জামদানির চাহিদা কমেছে আবার বেড়েছে বহুবার । জামদানি এখন বিলাস বহুল হয়ে উঠেছে , এসেছে এই শিল্পে নতুনত্বের চাপ ও । তবে হ্যাঁ বর্তমানে জামদানি নিয়ে বহু প্রচার প্রচারণা হচ্ছে , এদের মাঝে কোনটা আসল আর কোনটা নকল তা খুজে পাওয়া মুসকিল ।
নামকরণ :
প্রাচীনকালের সেই মিহি মসলিন কাপড়ের উত্তরাধিকারী "জামদানি। জামদানির নামকরণ নিয়ে বহু মতবাদের মধ্যে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য হল ‘জামদানি’ শব্দটি ফার্সি ভাষা থেকে এসেছে। ফার্সি জামা অর্থ কাপড় এবং দানা অর্থ বুটি, তাহলে জামদানির অর্থ দাড়ায় বুটিদার কাপড়। এখনো অনেকেই ‘জামদানি’ শব্দটা উচ্চারন না করে সেই আগে প্রচলিত ‘ঢাকাইয়া জামদানি’ বলতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। ‘জামদানি’ শব্দটা শোনামাত্রই আমরা যা বুঝি তা হচ্ছে শাড়ি। অন্তত এখন আমরা তাই বুঝি। তবে একসময় জামদানি দিয়ে নকশী ওড়না, কুর্তা, পাগড়ি, রুমাল, পর্দা এসবও তৈরি হত। ১৭০০ শতাব্দীর দিকে জামদানি দিয়ে নকশাওয়ালা শেরওয়ানির দারুণ প্রচলন ছিল। এছাড়া, মুঘল নেপালের আঞ্চলিক পোষাক “রাঙা’র” জন্যও জামদানি কাপড় ব্যবহার করা হত।"জামদানির প্রকারভেদ
জামদানী শাড়ী অনেক প্রকার হয়। তবে প্রাথমিক ভাবে জামদানী শাড়ীর উপাদান অনুযায়ী এটি দুই প্রকার।- হাফ সিল্ক "জামদানি– যার আড়াআড়ি সুতাগুলো হয় রেশমের আর লম্বালম্বি সুতাগুলো হয় তুলার।
- ফুল কটন "জামদানি- যা সম্পূর্ণ তুলার সুতায় তৈরি।
উৎপাদন ক্ষেত্র :
মূলতঃ বাংলাদেশের ঢাকা জেলাতেই মসলিন চরম উৎকর্ষতা লাভ করে। ঢাকা জেলার সোনারগাঁও, ধামরাই, তিতাবাড়ি, বাজিতপুর, জঙ্গলবাড়ি প্রভৃতি এলাকা মসলিনের জন্য সুবিখ্যাত । যেহেতু জামদানি প্রাচীনকানের মিহি মসলিন কাপড়ের উত্তরাধিকারী হিসেবে পরিচিত । তাই এই এলাকা গুলোই বর্তমানে জামদানি পল্লী হিসেবে পরিচিত ।প্রাপ্তিস্থান :
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জ ও সোনারগাঁর প্রায় ১৫৫টি গ্রামের প্রতিটি গ্রামেই রয়েছে জামদানি শাড়ির তৈরির তাঁত। শীতলক্ষ্যার তীরে দুপুরে বসে জাদানি হাট ।
বর্তমান বাজারে হরেক রকম জামদানির দেখা মিলে , আর তার ভিড়ে ঢাকাইয়া জামদানি খুজে পাওয়া মুশকিল , তার সেই করণেই জামদানি শিল্পকে উজ্জীবিত করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে , বড় বড় ফ্যাশার হাউজ গুলোও জামদানি নিয়ে কাজ করছে ।
এই সব মার্কেট থেকেও কিনে নিতে পারেন ঢাকাইয়া জামদানি । আর অন্যথায় ঘরে বসে ও অনলাইনে কিনে নিতে পারেন ঢাকাইয়া জামদানি । আর সেই জন্য আপনাকে যা করতে হবে , এই খানে
Comments
Post a Comment