এক অদ্ভুদ প্রেম

ঈষিতা কে দেখেলেই কেমন জানি আমি সব গুলিয়ে ফেলি। এটা কেন হয় তার আজও কোন ব্যাখ্যা বের করা আমার পক্ষে সম্ভব হয় নি। প্রথম থেকেই ভুল হয়ে আসছে। আজও তার ব্যতিক্রম কিছু ঘটেনি। ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি পড়ছে , সাহাবাগের রাস্তার পাশে দাড়িয়ে ঈষিতা। আমাদের গাড়িটা ঠিক তার বরাবর এসেই থামলো চোখে চোখ পড়তেই আমি আমি চোখ ঘুরিয়ে নিলাম । যখন আমার মাথায় আসলো এটা ঠিক হয়নি তখন আবার ঘুরে তাকেতেই আরেকটা গাড়ি এসে ইষিতাকে ঢেকে দিল আর দেখতে পেলাম না ।ভাবতে লাগলাম ঈষিতা কি আমায় দেখেছে ?
না দেখেনি। কারণ দেখলে ও নিশ্চয় আমাকে ডাক দিত।
আমি এমন কেন ভাবছি? আমিতো ওকে দেখেছি কই আমি তো ডাক দেইনি? হয়ত তাই ও আমাকে ডাকে নি। আর তাছাড়া আমিতো ওকে দেখেই মুখ ঘুরিয়ে নিলাম । এখন ও কি ভাববে । আর এখন আমার কি করার উচিত। আমার মাথায় না সহজে কোন কিছুই আসতে চায়না । যাকে ভালবাসি তাকে দেখে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া এটা কেমন আচরণ ? নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করেছি। আমার সাথে তো ওর কোন ঝগড়া হয়নি । তাহলে ?  না ওর কাছে যাওয়াটা আমার উচিত। এই যুগে এই ভাবে প্রমিকাকে কি একা একা পাওয়া যায় ? কত রতম কায়দা করে একটু সময়ের জন্য আসে তাও আবার কেউ দেখে পেলার ভয় কাজ করে সব সময়। ভাবতে ভাবতে  সবুজ বাতি জ্বলে উঠলো আর গাড়ি ছেড়ে দিল । লোক ঠেলে নামতে গিয়ে গাড়ি অনেকটা দুর চলে এসেছে। নেমে উল্টো হাটা দরলাম । আর ভাবতে লাগলাম এখন গিয়ে কি বলবো।

ঈষিতা আসলে আমি বুঝতে পারিনি এইটা যে তুমি । আর তুমি এত রাতে এইখানে একা একা দাড়িয়ে থাকবে এটা আমি ভাবতেও পারিনি।
আর ভান করতে হবে না । এই বলে ঈষিতা মুখখানা  একটু ব্যাকা করলো।
এই ভাবে তো তোমায় বেশ সুন্দর দেখায়। এত রাতে এখানে কেন এসেছো ?
ফুল কিনতে ।
কিনলেনা যে।
কিনলাম , আবার দিয়েও দিলাম ।
 কাকে দিলে?
যাকে দেওয়ার জন্য ফূল কিনেছি তাকে  আবার কাকে?
বিরতটা কেমন যেন করে উঠলো। এতদিনের লালিত স্বপ্ন কি আজ ধুলোয় মিশে যাবে নাকি? নিজেকে সামলে নিয়ে জিজ্ঞাস করলাম ,  ওহ আচ্ছা তো ওনি এখন কোথায় , তোমাকে এত রাতে এভাবে রেখে চলে গেল ।
না যায়নি , ওরা এখানেই থাকে ওইতো। এই বলে কিছু পথ শিশুর দিকে তাকালো।
খুব বড় ভয় পেয়ে গেছি , মনে হচ্ছে সুনামি টা আসতে চেয়েও আসেনি। ঈষিতা আবার পথ শিশুদের খুব ভালবাসে।
বাসায় ফিরবে কখন ?
এইতো যাবো বলেই দাড়িয়ে আছি।
ওকে চল তোমাকে নামিয়ে দিয়ে আসি।

না এগুলোর কিছুই হল না । এতক্ষণ যা শুনলেন তা ছিল আমার কল্পনা । বাস্তব ঠিক উল্টো । আমি গেলাম সেই স্থানে যেখানে ঈষিতা দাড়িয়ে ছিল , কিন্তু ফেলাম না , মনে হয় আমি আসার আগেই ও চলে গেছে । অনক খুজেছি। পাইনি।

------------ সেদিনের সেই ঘটনার পর আজ কয়েক দিন হল ওর দেখা পাইনা। ওদের বাসায় ও যাইনি আমি গেলে হয়ত দেখা মিলতো । ওদের বাসায় যেতে আমার কোন বাধা নেই । যাইনি তার কারণ নিজের কাছেই খুব লজ্জা লাগছে। কি বলবো ওকে ।ঈষিতা যদি রাগ করে কথা না বলে আমার সাথে।

দোতলা বাড়ি ঈষিতাদের , গেট পেরিয়ে সোজা বাড়ির ভিতরে । কাজের ছেলে টাকে জিজ্ঞাস করলাম ঈশিতা কি বাড়িতে আছে?
দিদি মনি ওনার ঘরেই আছে। এই বলে কাজের ছেলেটা তার কাজে চলে গেল ।
প্রথমেই তার বাবার সাথে দেখা । ওনাকে দেখলে আমার কেমন যেন ভয় দরে যায় , যদিও কোন দিন আমার সাথে কোন রকম বড় গলায় কথা বলেননি । তারপরেও , সামনা সামনি দেখা হওয়ায় সালাম দিলাম ।
সালামের উত্তর নিয়ে , বললো কেমন আছ?
জ্বী ভাল আছি, আপনি ভাল আছেন ?
বয়স হয়ে গেলে মানুষ জন যেমন থাকে তেমনই আছি। তোমার লেখালেখি কেমন চলছে ?
এমন প্রশ্নের জন্য আমি প্রস্তুুত ছিলাম না । তার পরও বললাম হ্যাঁ কোন রকম চলছে ।
কেন কোন রকম কেন ? এখনইতো বয়স পরে । যা লিখার এখনই লিখতে হবে । পরে কি আর এমন করে লিখতে পারবে । চালিয়ে যাও একদিন এর সুফল পাবেই।
মাথা নিচু করে উত্তর দিলাম ঠিক আছে আংকেল।
যাও এরা সবাই ভিতরেই আছে।
সোজা ঈষিতার রুমে , টেবিল এর উপর মনোযোগ দিয়ে কি যেন পড়ছে। পিছন থেকে চোখ ধরতেই লাপিয়ে উঠলো ঈষিতা।
খাটের উপর বসলাম ,
তুমি ? তুমি এখানে কি করছো ?
তোমাকে দেখতে মন চাইলো তাই চলে আসলাম । জানো , ঈষিতা তোমাকে না দেখে আমি থাকতেই পারি না ।
হয়েছে আর বানিয়ে বানিয়ে বলতে হবে না।
আমি না  একটু রোমান্টিক ভাবে কথা ও বলতে পারি না । বলতে গেলেই ঈষিতা বুঝে যায় যে আমি এগুলো কারো কাছ থেকে শিখে এসেছি।
ঈষিতা ?
কী বল।
একটা জিনিস চাইবো । দিবে ?
দেওয়ার মত হলে দিবো।
একটা আদর মানে একটা কিস, মাঝে মাঝে দেখি উদ্যান গুলোতে প্রেমিক যুগল বসে থাকতে , আর তাদের মধ্যে এই রকম আদান প্রদান হতে । আমার না খুব লোভ হয় । এই দিকে আমার পুরো শরীর দিয়ে যেন বিদ্যুৎ চলতে লাগলো । ঈষিতা কোন রকম না বলেই আমার দিকে এগিয়ে আসলো , মনে হচ্ছে ঈষিতাও এই দিনটির অপেক্ষায় ছিল যে আমি ওর কাছে এমন একটি জিনিস চাইবো । ঈষিতা আমার হাত টা ধরে ওর দিকে নিয়ে যাচ্ছে। পিঠে একটা ঝোরে থাপ্পর দিয়ে কে যেন বলে উঠলো কিরে এখানে দাড়িয়ে কি করছিস। মুখ পিরিয়ে দেখলাম রানু ভাবি । এটাও আমার স্বপ্ন ।
ওহ রানু ভাবি যে , আসলে কাউকে দেখতে পাচ্ছিনা তো তাই দাড়িয়ে রইলাম ।
ভিতরে যাও, ঈষিতা ঘরেই আছে।
আচ্ছা ঠিক আছে। এই বলে ঈষিতার ঘরের দিকে পা বাড়ালাম । একটা সুন্দর স্বপ্ন দেখছিলাম সেটাও নষ্ট হয়ে গেল্ আসলে আমার কপালটাই এমন । ঈষিতা ঘরে নেই , ঘরের দরজা খোলা , থাক আজ আর ওর াসাথে কথা বলার দরকার নেই , অন্যদিন বলবো নি , এই ভেবে  বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লাম । আসলে কি আমি এমনই ঈষিতার সামনে গেলে সব কিছু এলোমেলো  হয়ে যায় । তখন যেন কিছুই মুখে আসেনা ।


আজ বেশ কিছু দিন ঈষিতা কে দেখিনা ও কলেজে ও যায়না বোধ হয় । কারন কলেজ গেলে আমার বাসার সামনে দিয়েই যেতে হয় ওকে ,আর আমি সারা দিন এর পথ চেয়েই বসে থাকি।

রাত ঠিক বারোটা আমি ঈষিতাদের দেয়াল টপকে ( যেটা আমার দ্বারা কোন দিন সম্ভব ছিলনা ) বাড়ির ভিতরে।
ঈষিতার রুমে । ঈষিতা ঘুমোচ্ছে । টেবিলের উপর রাখা লেম্পটা নিবু নিবু করে জ্বলছে , দরজা লাগানো । লেম্পের আলোতে ঈষিতাকে খুব ভাল লাগছে । ভাবছি এখনই কি ওকে জাগাবো নাকি আরো কিছু ক্ষণ ঘুমন্ত ঈষিতাকে দেখবো । অবশ্য এটাই প্রথম , এর আগে আমি কখনও ঘুমন্তো ঈষিতাকে দেখিনি । ধীরে ধীরে ঈষিতার পাশে বসলাম , তবে মনে একটা ভয় কাজ করছে যদি ঈষিতা হঠাৎ জেগে ওঠে আর চিৎকার করে সাবাই কে জেগে তোলে তাহলে কি হবে? আবার ভাবছি না ও আমায় দেখলে এমন কিছুই করবেনা । ফ্যানের বাতাসে কয়েকটা চুল এসে ওর মুখের উপর পড়লো তাতে আমার দেখার ব্যাঘাত ঘটছে আর তাই চুল গুলো সরাতে যেতেই ঈষিতা জেগে উঠলো । কি ব্যাপার মেয়েদের চুলকি এতটাই চেনসেটিব নাকি হাত দিলেই ঘুম ভেঙ্গে যায় ?
 তাড়া হুড়ো করে ঈষিতা উঠে বসলো , হাত দিয়ে উড়না টেনে গায়ে দিলল , তুমি এখানে এত রাতে কি করছো।
না মানে আমি কোন খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে আসিনি , বিশ্বাস করো। আমার ঘুম আসছিলনা আর তাই তোমায় দেখতে চলে এলাম । বিশ্বাস কর আমি তোমাকে চাই । তোমাকে ছাড়া আমার চলবে না ।
দেখ তোমার অনেক সম্মান আছে । আর আমি এক সাধারণ মেয়ে । তুমি চলে যাও যদি কেউ দেখে নেয় তাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।
না ঈষিতা কিছু হবে না । আমি তোমাকে ছাড়া বাচবো না । তুমি আমায় ফিরিয়ে দিওনা । জানো ঈষিতা আমি তোমায় খুব ভালবাসি। কিন্তু আমি সবার মতো করে গুছিয়ে  বলতে পারিনা । তারপরও আমি তোমায় ভালবাসি। বিশ্বাস করো।
দেখ এই মাঝরাতে একটা যুবতী মেয়ের ঘরে একটা যুবক লোকে কি ভাববে ?
লোকের কথায় আমার কিছু আসে যায় না । চলে যেতে পারি এক শর্তে।
কি শর্ত বল ।
তুমি আমায় জড়িয়ে ধরে একটা চুমু খাবে তার পর আমি চলে যাবো । ( এই প্রথম এর আগে কখনও চাইনি )
ঈষিতা মাথাটা নিচু করে বসে রইলো , লজ্জা পেয়েছে বোধ হয় । একটু ধাক্কা দিয়ে কি কি হলো ।দাও?
তাহলে তোমার চোখ বন্ধ করতে হবে ।আগে তুমি চোখ বন্ধ করো তারপর আমি দিবো।
ঈষিতার কথা অনুযায়ী আমি চোখ বন্ধ করলাম , ঈষিতার গায়ে গন্ধ পাচ্ছি , ও আমার দিকে ওগিয়ে আসছে , ওর গাড় নিশ্বাস আমার মুখে লাগছে , আস্তে আস্তে ও আমার মুখটা ওর দিকে টেনে নিয়ে গেল , ঠি ক এমন সময় মা এসে কাথাটা সরিয়ে বলল কিরে নবাবজাদা আর কতক্ষণ , আমি কি সারাদিন তুর নাস্তা নিয়ে বসে থাকবো ? সকল মঝাটাই শেষ হয়ে গেল । আমি ভাবতেই পারছিনা যে এটাও স্বপ্ন ছিল , আমার কাছে মনে হলো মায়ের আসাটা স্বপ্ন ।কি আর করা স্বপ্ন তো আর ভেঙ্গে ভেঙ্গে দেখা যায় না ? না হয় আবার দেখতাম . যেখানে শেষ হয়েছিল সেখান থেকে আবার শুরু করতাম ।
আমার একটা নতুন চাকরি হয়েছে কাজের অনেক চাপ , ঈষিতাদের বাড়ি যাওয়া হয় না । ঈষিতা এখন আর এই বাড়িতে থাকেনা , থাকবেই বা কেন ? ওরতো বিয়ে হয়ে গেছে , শুনেছি ওর নাকি বাচ্ছা হবে।

আজ ছুটি ভাবলাম কেমন আছে সবাই একটু দেখে আসি ।  যে ভাবনা সেই কাজ , ঈষিতাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম । বাড়িতে ঢুকতেই বড় ভাবির সাথে দেখা ।
কি ব্যাপার এখনতো আর দেখাই যায়না্ পিছন থেকে ছোট ভাবি এসে কথায় টোপ দিয়ে বসলো , এখন আর কেনো আসবে , এখন তো আর সে নেই , খালি বাড়িতে এসে কি লাভ বল?
ওহ আপানাদের কে তো বলাই হয়নি ঈষিতারা দু ভাই দু বোন , ঈষিতা সবার ছোট, ভাইয়েরা বিয়ে করেছে । ভাবিদের মধ্যে বেশ মিল , যা এখনকার যুগে তেমন দেখা যায় না।
না ভাবি কি যে বলেন ? আসলে নতুন চাকুরি তেমন সুয়োগ নেই তাই আসতে পারি না ।
তো খবর কি কিছু জানো ?
 কি খবর?
ঈষিতার একটা ফুটফুটে ছেলে হয়েছে । ছিলোতো এতদিন , তোমার কথা জিজ্ঞাস করেছে অনেক বার . আমাদের কাছে তো তোমার ফোন নাম্বার নেই যে তোমাকে ফোন করে খবর টা দিবো ।এইতো দু-দিন আগেই চলে গেল ।

এই হচ্ছে আমার আর ঈষিতার গল্প যা কিনা কখনও বলতেই পারিনি তাকে আমি ভালোবাসি। তার পরও ভালো লাগে। আমি তো ওকে সুখে রাখতে চেয়ে ছিলাম । এখনতো ও দিব্বি সুখে আছে , এইটাই তো চেয়েছিলাম । আর কি । এখনও পথ চেয়ে বসে থাকি ঈষিতা আসবে আর আমি ওকে বলবো আমি তুমায় ভালবাসি।  ........................................
.............................................................................................................................................









Comments

Popular posts from this blog

প্রবাহমান জীবন ও কিছু কথা!

"ফরেস্ট গাম্প " একটি অনুপ্রেরণার গল্প, একটি মৃত প্রাণকে তাজা করার সিনেমা

পানাম নগর, আমার এবেলা ওবেলা