লাইট , সাউন্ড ক্যামেরা , Action । আমার সিনেমা বানানোর গল্প . পর্ব- ২

ফিল্ম এর অফিসিয়াল পোষ্টার 



লাইট , সাউন্ড ক্যামেরা , Action  ,
শুরু হয়ে গেলো , অভিনয় , ডায়লগ দেওয়া , একটু ভুল হলেই , "কাট"
আবার নতুন ট্যাক । শুনেছি , দেখেছি , কিন্তু বলা হয় নাই কখনও , এইবারই প্রথম , আমি Action বললেই শুটিং শুরু হবে । ভিতরে একটু ভয় কাজ করছে । তাতে কি বিশ্বাস আছে আমি পারবো । গতরাতে অনেক সময় নিয়ে বৃষ্টি হয়েছে । এখন অবশ্যই নাই । প্রথম চিন্তায় পড়ে গেছি , শুটিং হবে কিনা । সারা রাত না ঘুমিয়ে ভোর ৫টায় বাসা ত্যাগ করলাম । গাড়ী চলে গেলো , সাবইকে নিতে , আমি সাথে সহকারী পরিচলক সহ সিএনজিতে করে শুটিং স্পটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করলাম । এক এক করে সবাই চলে এলো , স , একটা শর্ট ইনডোরে নিয়ে তার পর চলে যাবো আউটডোর । ওখান থেকে শেষ করে আবার ইনডোর । একদিনেই শুটিং শেষ করবো । সেই অনুযায়ী সব সাজানো হয়েছে । আর্টিস্টদের মেকআপ মাখাচ্ছে , 
নায়িকাকে মেকআপ দেওয়া হচ্ছে 




বড় ভাই এবং প্রিয় মানুষটিকে যখন মেকআপ দিচ্ছে 




মেকআপ দেওয়া শেষ , এর মধ্যে সেট প্রস্তুত । কাউন্ট ডাউন শুরুজিরোওয়ানটুথ্রি
লাইটসাউন্ডক্যামেরা…Action…
তখন সময় সকাল  ৯টা , শুরু হয়ে গেলো শুটিং , কেউ লক্ষ্য করুক আর না করুক আমি নিজেই লক্ষ্য করলাম Action শব্দটা আমার মুখ দিয়ে একটু জোরেই বের হয়েছে । হয়তো বা নিজেকে শক্তি দেওয়ার জন্য এইটা হলো । তারপর নিজে নিজেই একটু হেসে নিলাম । 

প্রথম ধাপের শুটিং


খুব বেশী সময় নেয় নি , প্রথম ধাপের শুটিং শেষ , প্রধান সহকারী পরিচালকে আগে থেকেই সব বলা ছিলো । তার সাথে মনের এবং কাজের দুটোতেই মিল আছে বেশ । সে চিৎকার দিয়ে বললো ইউনিট মুভ । আমরা এখন আউটডোর শুট এ যাবো । গাড়ি রেডি .. যাদের যাদের প্রয়োজন আছে কেবল তাদের কেই নেউ হবে । বাকিরা , হাউজেই থাকবে । যে যার মতো গাড়িতে উঠে গেলো ,উদ্দেশ্য , বিরুলীয়া , গাড়ি পৌছে গেলো । আগে থেকেই বলা ছিলো ,  পুনরায় আবার শুটিং শুরু , ড্রেস , মেকাপ , সেট সব প্রস্তুত হচ্ছে ..এই খানে আমরা কোন কোন শট নিবো   তা বুঝিয়ে দিলাম , প্রধান সহকারী পরিচালক সহ সকলকে   ।
শট এবং দ্বায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার সময় ফ্রেম বন্ধী করলেন , প্রিয় ফটোগ্রাপার অভি ভাই । 


পুনরায় লাইট ,ক্যামেরা , সাউন্ড Action .... শুরু হলো , শুটিং ....

বিরুলিয়ার কিছু ছবি .......

না ওখানে গুপ্ত ধন নেই , কিন্তু তার থেকেও বেশী কিছু আছে ।


ওইযে ওই দেখো , ওখানেই হবে তোমার আমার বাস.........না এমনটা বলা হয়নি , কি বলা হয়েছে তা আমার কানে আসে নি ..
সঠিক স্থানে সঠিক কিছু বসানোর চেষ্টা চলছে....


তোমায় নিয়ে ভেসে যাবো দুর অজানার দেশে..........


চলনা সখী আরেকবার হাটি তোকে নিয়ে .. সেই কাঠের সাকুর উপর দিয়ে....

তৃপ্তি অতৃপ্তির পর্ব শেষে এই বার যাবার পালা , এই পর্বে আমাদের সাথে পকৃতিও অনেক খেলেছে , একটু পর পর বৃষ্টি , গাড়ির শব্দ , অনেক গুলো সমস্যা , তারপরও শেষ হলো শুটিং ।  কেউ একজন বলে উঠলো ইউনিট মুভ । যাহা চেয়েছি তাহা পাইনাই হয়তো , কিন্তু যাহা পাইয়াছি তাহাই অনেক বড় ছিলো.... 
শুটিং শেষে ফেরার পথে , পুনরায় ফ্রেম বন্ধী 
ফিরে আসলাম , আবার ব্যস্ত নগীরর বুকে ... ইট পাথরের দেওয়ালের মাঝে । আউটডোর আরো কিছু শট বাকি আছে আর সে গুলো নিতে হবে রাস্তায়, হাউজের সামনে । কিন্তু এইতো সমস্যা , মানুষকে কন্ট্রোল করা হচ্ছে শুটিং এ সব থেকে বড় সমস্যা ।যাই হোক সব মিলিয়ে ওই দৃশ্য নেওয়া শেষ , এখন যাবো খাবার এর বিরতীতে । তখন বিকাল ৪টা , বিরুলীয়াতে একটু সময় বেশী লেগে যায় । মাথায় তখনও চিন্তা , কারণ এখনও বেশ কিছু দৃশ্য বাকি । মনে মনে এই সব চিন্তা , মুখে জোর দিয়ে বলছি , আজকের মধ্যেই শুটিং শেষ , এই ছবির জন্য , আরেক দিন সেট বসাতে পারবো না । যাই হোক , এইবার খাবার বিরতি . এখন সবাই খেতে ব্যস্ত সময় তখন ৪টার উপরে ।
চলছে খানা পিনা ......

এই দিক ওই দিক , খাবার বিরতির পর পুনরায় শুরু হলো শুটিং । শেষ মুহর্ত্বে এসে হলো নতুন এক ঝামেলা । হাউজটি আমাদের ভাড়া করা ছিলো না, পরিচিত এক ভাইয়ের হাউজে শুটিং , একটা কারণে উনি বিগড়ে গেলেন , আর খুব গরম হয়ে বলে দিলেন আর শুটিং করা সম্ভব না । আমরা যেন ইউনিট , মাল পত্র গুছিয়ে চলে যাই । সবাই হতাশ, এখন কি করবো ? হাউজটা পেয়েছি সিনেমাটোগ্রাফার এর মাধ্যমে , সিনেমাটোগ্রাফার বড় ভাই বললেন আমার কিছু করার নেই , আমি তোমাকে আরেকদিন ব্যবস্থা করে দিবো অন্য কোথাও, আজকের মতো প্যাক আপ করো , আমার মাথায় তখনও ঘুরছে না  আরেক দিন না , আমি আজকের মধ্যেই শুটিং শেষ করবো । যাই হোক করা করা যায় , সেটা পরে , আপাতত প্যাডে যাই , ওখানে একটা দৃশ্য আছে সেটা শেষ করি তারপর ভাবা যাবে । বৃষ্টি তারপর এই ঝামেলা , তার উপর এটাই প্রথম ....নিজের পরিচালনায় । সব মিলিয়ে যা হচ্ছে সব কিছু থেকেই শেখার আছে । প্যাডে চলে গেলাম , সেট রেডি , শুট শুরু । 
আমি প্রস্তুত , তবে হয়ে যাক শুরু , এমনটাই ভাব ছিলো নায়কের ।
প্যাডের দৃশ্য শেষ দিকে , কিন্তু কি করা যায় ..? তবে কি এই খানেই শেষ ? আমি সহকারী পরিচালক , সহ স্থির চিত্র গ্রাহক , সবাই আলোচনা করছি , বাকী দৃশ্য গুলোর কি করবো ? তখন রাত ১০টা বাজে । এমন সময় জুসি ( সেও অভিনয় করেছে এই ফিল্মে ) বললো যে তাদের বাসায় শূটিং করতে । জিজ্ঞাস করলাম সমস্যা হবে নাতো ..? উত্তরে সে বললো না হেব না , আমাদের চিন্তিত দেখে সে বাসায় কথা বলেছে , কোন সমস্যা নাই যেতে পারি । তীব্র খরার মাঝে ফসলি জমির উপর বৃষ্টির পানি পড়লো । ইউনিট জুসিদের বাসায় । যে ভাবেই হোক রাত ১২ টার আগে শুটিং শেষ করতে হবে , কারণ এইটা অন্যের বাসা । তাছাড়া একটা আবাসিক এরিয়া । সবাই একটু তাহাহুড়ো করছে , সেট রেডি, দৃশ্য শুরু , ক্যামরা চলছে ।

ব্যস্ত সময় .... আর এই দিকে নায়ক নায়িকা মধুর আলাপ করছে !! নাহ এমনটা না , তারাও ডায়লগ দেখে নিচ্ছে যাতে করে ভুল না হয় । 

প্রধান সহকারী পরিচালকে দৃশ্য বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে । 

সকল ঝড় ঝাপটা মাঝেও শেষ হলো আমাদের শুটিং । ইউনিট প্যাকআফ । জীবনের প্রথম আমি পরিচালকের আসনে । অনুভুতিটা বেশ ভালোই ছিলো । অনেক কিছু শেখার ও ছিলো । যখন আমরা গাড়ি তে ইঠবো তখন সময় রাত ১টা .. বাসায় ফিরতে ফিরতে প্রায় ২টা বেজে গেছে , এলাকার সকল হোটেল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় না খেয়ে ঘুম । একটা শান্তির ঘুম । দেখতে দেখতে সময় চলে গেলো । সবার সামনে এখন ট্রেইলর ও দিয়ে দেওয়া হয়েছে ।

যাদের ধন্যবাদ না দিলেই নয়  : প্রথমত ইউনিটের সবাইক ধন্যবাদ । আলাদা করে , জুসি কে , বিপদের সময় এতো বড়ো সাপোর্ট দেওয়ার জন্য । Najib tareque স্যার কেও ধন্যবাদ , আপনার বাড়িতেই প্রথম দিকের দৃশ্য গুলোর শুট হয়েছে । সত্যি আমাদের টিম টা বেশ ভালো ছিলো.। না হলে একদিনে কোন ভাবেই সম্ভব হতো না । সবাই নিজের অবস্থান থেকে তার সর্বোচ্চটা দিয়েছে । আবার সবাইকে ধন্যবাদ । 








Comments

Popular posts from this blog

প্রবাহমান জীবন ও কিছু কথা!

"ফরেস্ট গাম্প " একটি অনুপ্রেরণার গল্প, একটি মৃত প্রাণকে তাজা করার সিনেমা

পানাম নগর, আমার এবেলা ওবেলা